পুলিশের উপস্থিতিতে বোলপুর প্রশাসনিক ভবনে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র
ছাত্রীদের লেগিংস খুলে নেওয়ার অভিযোগকে ঘিরে গত ক’দিন ধরেই বিতর্কে জড়িয়েছে বোলপুরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। জেলা প্রশাসনের তরফে তদন্তও শুরু হয়েছে স্কুলের বিরুদ্ধে। এ বার অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করল প্রশাসন।
শুক্রবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ বোলপুর প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে হওয়া ওই বৈঠকে স্কুলের তিন জন সিস্টার এবং কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না স্কুলের প্রিন্সিপাল সিস্টার। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাশাসক (বোলপুর) অভ্র অধিকারী, এসডিপিও (বোলপুর) অভিষেক রায়, এক জন ম্যাজিস্ট্রেট, স্কুল পরিদর্শক
(প্রাথমিক ) সমরেন্দ্র নাথ সাঁতরা এবং অন্য কয়েক জন আধিকারিক। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক চলে। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নির্দেশে এ দিন দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়েছিল। সকলের মতামত শোনা হয়েছে। এই বৈঠকের
রিপোর্টটি আমরা দ্রুত জেলাশাসকের হাতে তুলে দেব।’’
স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এই ক’দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কেউ কথা বলছিলেন না। ফলে, স্কুলের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের তোলা অভিযোগের কোনও প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যাচ্ছে না। এ দিন অবশ্য বৈঠক শেষে লেগিংস খোলানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ স্কুল করছে, জানতে চাইলে স্কুলের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, সিস্টার জে সি বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি স্কুলের পরিচালন সমিতিকে জানানো হয়েছে।’’ যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’’ অভিভাবক বনানী বন্দোপাধ্যায়, রাকেশ শর্মারা বলেন, ‘‘বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাদের সামনে আমরা আমাদের অভিযোগগুলি জানিয়েছি। প্রিন্সিপালকে অপসারণের কথাও বলেছি। প্রশাসন বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছে।’’
লেগিংস-বিতর্কের মধ্যেই আচমকা একটি পরীক্ষা বাতিল করে আজ, শনিবার স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে। অভিভাবকদের একাংশের দাবি, শুক্রবার তাঁদের এসএমএস মারফত জানানো হয়, শনিবারের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। ওই পরীক্ষা নেওয়া হবে সোমবার। অভিভাবকদের দাবি, লেগিংস-বিতর্কের জেরেই স্কুলে তাঁদের লাগাতার বিক্ষোভ এবং প্রিন্সিপালকে অপসারণের দাবি তোলাতেই অস্বস্তি এড়াতে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কেন আজ স্কুল বন্ধ, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এরই মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন ওই স্কুলের এক ছাত্রীর মা। তাঁর দাবি, অন্য কয়েক জন ছাত্রীর সঙ্গে তাঁর মেয়েকেও সোমবার স্কুলে লেগিংস খুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে তাঁর ছোট্ট মেয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। বৃহস্পতিবার স্কুলে গেলে সে দিনের ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলার জন্য তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ ওই অভিভাবিকার। হুমকির কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবারই তিনি শান্তিনিকেতন থানায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর আরও দাবি, অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য তাঁকে স্কুলের তরফ থেকে থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, তিনি নিজের জায়গায় অনড়।
ওই অভিভাবিকা জামবুনি বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি নার্সিংহোমে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন সকালে আমার কর্মস্থলে আসেন স্কুলের কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা। আমাকে ডাকাডাকি করেন তাঁরা। কিন্তু, ভয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘স্কুলের তরফে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ আসছে। আমার মনে হয় সে কথা বলতেই ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমার কর্মস্থলেও চলে এসেছিলেন। এই ঘটনাও আমি বিস্তারিত ভাবে শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত জানিয়েছি।’’