সংবাদমাধ্যমে ‘রবীন্দ্রভবনের সিসিটিভি অকেজো, প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা’— এই খবর জানাজানি হতেই তড়িঘড়ি ক্যামেরা চালু করতে তৎপর হল বিশ্বভারতী। রবীন্দ্রভবনের দাবি, ‘‘ক্যামেরা বিকল নয়, এসি খারাপ থাকার কারণে মাঝে মাঝে ক্যামেরা বন্ধ করা থাকে!’’ এমন ব্যাখ্যা শুনে বিশ্বভারতীর বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, উত্তরায়ণের নিরাপত্তার জন্য যেখানে এত টাকা খরচ হচ্ছে, সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয় কোন যুক্তিতে।
এ দিকে সোমবার দিনই সকালে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা উত্তরায়ণে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর শুরু করে। এমনকী এ দিন রবীন্দ্রভবন খোলা হতেই, বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্য অধ্যাপক স্বপন দত্ত নিজেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে হাজির হন। রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ তপতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিসিটিভি সম্পূর্ণ অকেজো ঘটনাটি সঠিক নয়। সিসিটিভি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং নিয়ন্ত্রণ করা ঘরের এসি বিকল ছিল। তাই আমরা মাঝে মধ্যে সিসিটিভি চালু রাখতাম। ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আশা রাখছি আর অসুবিধে হবে না।”
ঠিক কবে থেকে অকেজো রয়েছে রবীন্দ্রভবন-সহ উত্তরায়ণের সিসিটিভি ক্যামেরা?
রবীন্দ্রভবনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে উত্তরায়ণ এলাকার সিসিটিভি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। আর যার জেরে, বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে রবীন্দ্র ভবনের নিরাপত্তা। শুধু তাই নয়, একই সংযোগ থেকে চলা কলাভবনের নন্দন গ্যালারি, গ্রন্থাগার, স্ট্রং রুম-সহ একাধিক জায়গার সিসিটিভি ব্যবস্থাও বন্ধ! স্বাভাবিক কারণে, রবীন্দ্রভবন তথা উত্তরায়ণ কমপ্লেক্সে, কলাভবনের মতো অতি সংবেদনশীল এলাকার সিসিটিভি ব্যবস্থা চালু রাখার দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাবার পরে জলঘোলা হতেই টনক নড়ে বিশ্বভারতীর।
২০০৪ সালের ২৫ মার্চ এই রবীন্দ্রভবন থেকেই চুরি হয়ে যায় নোবেল পদক-সহ ঠাকুর পরিবারের বেশ কিছু দুর্মূল্য সামগ্রী। দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই তদন্তে নেমেও, রবিকোষে চুরির কোনও হদিস করতে পারেনি আজও। পুলিশ প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ প্রাক্তন এবং তৎকালীন আধিকারিকদের দিয়ে গঠিত হয়, হাই লেভেল সিকিউরিটি এক্সপার্ট কমিটি। ওই কমিটির সুপারিশ মেনে ঢেলে সাজানো হয় রবীন্দ্রভবন তথা উত্তরায়ণ কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা। শুধু তাই নয়, বিশ্বভারতীর হেফাজতে থাকা বিশিষ্ট শিল্পী এবং মনীষীদের শিল্পকর্মের সংরক্ষণ ও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও শুরু হয় বিশেষ ব্যবস্থা। উচ্চস্তরীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে, ত্রিস্তরিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় রবীন্দ্র-সামগ্রী সুরক্ষায়। বসানো হয় সিসিটিভির মতো নিরাপত্তা বিষয়ক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। উত্তরায়ণ চত্বরে এবং রবীন্দ্রভবন ও কলাভবনের নন্দন আর্ট গ্যালারি, স্ট্রং রুম নিয়ে মোট ৮০টি সিসিটিভি বসানো হয় বলে খবর।
রবীন্দ্রভবন সূত্রের খবর, সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ করা হয় যে ঘরটি থেকে সেই ঘরের দুটি এসি বিকল হয়ে রয়েছে। সিসিটিভি চললে তার নানা যন্ত্রাংশের কারণে ঘরটি গরম হয়। সে থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনা এড়াতেই সিসিটিভি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্বভারতীর আধিকারিক সভার সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রিশেখর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গোটা ঘটনায় আমরা হতবাক! এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। গোটা বিষয়টিই তদন্ত করে দেখা হোক।’’ এ দিন এসি মিস্ত্রি নিয়ে মেরামত করা-সহ প্রয়োজনে অস্থায়ী ভাবে দু’টি এসি বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন অস্থায়ী উপাচার্য স্বপনবাবু। স্বপনবাবু বলেন, “এসি দু’টি সচল করা হয়েছে। সিসিটিভিও চালু হয়েছে।’’