বদড়া গ্রিনহাউসে নার্সারি বাঁচানোর কাজ চলছে। ছবি: সমীর দত্ত
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের বকেয়া টাকা চেয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পের শ্রমিকদের রুজির ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন দফতরের মাধ্যমে কাজ দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমনই যে বকেয়া না আসায় পুরুলিয়া জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প ‘মাটির সৃষ্টি’-র বিভিন্ন কাজই ঠিক মতো চালানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া টাকা আসেনি। কবে মিলবে জানা নেই। এ অবস্থায় জেলার বেশির ভাগ পঞ্চায়েতের পক্ষে মাটির সৃষ্টি প্রকল্প রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তবে সে চ্যালেঞ্জও উতরোনো যাবে, আশাবাদী তিনি।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৭০টি পঞ্চায়েতের শতকরা ৭০ ভাগে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্প রয়েছে। সভাধিপতির নিজের গ্রাম লাখরা পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা বদড়া গ্রামে ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে প্রজাপতি বাগান, পুকুরে বোটিংয়ের ব্যবস্থা, আনাজ, ফল ও ভেষজ গাছের চাষ, হাঁস প্রতিপালন-সহ নানা কাজ হয়। পঞ্চায়েতের সচিব গৌতম দাস বলেন, “এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় গাছ লাগানোর অর্ধেক কাজ মিটে যায়। লোকের অভাবে এখন কোনও মতে নার্সারিগুলি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।”
মানবাজার ১ ব্লকের জিতুজুড়ি পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক রাজু দাস জানান, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে যাঁরা সরাসরি উপভোক্তা হিসাবে কাজে যুক্ত ছিলেন, সেই ‘জব-কার্ড’ধারীদের মজুরি দেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে হাতিপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের জন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন করে পরিকল্পনা রূপায়ণ করা তো দূরের কথা, আগের নেওয়া পরিকল্পনাতেই কাটছাঁট করতে হচ্ছে। একই দাবি মানবাজার ২ ব্লকের কুমারী পঞ্চায়েতের সচিব নিশীথ সাহানারও।
এ পরিস্থিতিতে প্রকল্পের কাজ কী ভাবে চলবে? সভাধিপতি বলেন, “পঞ্চায়েত এলাকায় ছোট ছোট কাজে জব-কার্ডধারীদের অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সে সঙ্গে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে নার্সারি, গাছ লাগানোর মতো কাজে অন্য খাতের বরাদ্দ থেকে আপৎকালীন সাহায্য নিয়ে কাজ চালু রাখতে বলা হয়েছে।”
পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশের অবশ্য তার পরেও ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে ঋতুভিত্তিক যে সব চাষ হয়, সেগুলি কতটা বাঁচবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সমস্যা মানছেন গ্রামোন্নয়ন দফতরের জেলা আধিকারিক তথা জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পের নোডাল অফিসার পবিত্র বিশ্বাস। আগে যেখানে জেলায় ৭০-৮০ হাজার জনের মতো একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কর্মসংস্থান হত, তা তিন-চার হাজারে দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা না-আসার প্রভাব পড়েছে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে। মূলত, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে এই প্রকল্প অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই পরিকল্পনায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে।”