প্রতীকী চিত্র
হাসপাতালের মাতৃকক্ষের শৌচালয় থেকে উদ্ধার হল এক প্রসূতির ঝুলন্ত দেহ। মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে লক্ষ্মী বাউরি (২৭) নামে ওই প্রসূতির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।বুধবার সকালে হাসপাতালে বিডিও (রঘুনাথপুর ১) অনির্বাণ মণ্ডল দেহের সুরতহাল করেন। পরে তা ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, আত্মহত্যা করেছেন ওই বধূ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিতুড়িয়া থানার রঘুডি গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবীর বছর তিনেক আগে বিয়ে হয় ঝাড়খণ্ডের নীরসা থানার পোড়াডির বাসিন্দা ঝণ্টু বাউরির সঙ্গে। তাঁদের বছর দু’য়েকের একটি মেয়ে রয়েছে। ফের সন্তানসম্ভবা হওয়ায় লক্ষ্মীদেবী দিন দশেক আগে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিতুড়িয়ায় বাপের বাড়িতে আসেন। শুক্রবার তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সোমবার সেখানে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, সদ্যোজাত অসুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালের নবজাতক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তার ঠিক পাশেই মাতৃকক্ষে সোমবার রাত থেকে রাখা হয়েছিল লক্ষ্মীদেবীকে। তাঁর সঙ্গে পালা করে থাকতেন মা কল্যাণী বাউরি ও মামিমা রিনা বাউরি। মঙ্গলবার রাতে ছিলেন রিনাদেবী। তবে ঘটনার সময়ে তিনি হাসপাতালের বাইরে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মাতৃকক্ষে থাকা আর এক প্রসূতি শৌচালয়ে যেতে গিয়ে দেখেন, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে। ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায় তিনি খবর দেন হাসপাতালের কর্মীদের। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার নির্মল মণ্ডল বলেন, ‘‘হাসপাতালের কর্মীরা জানান, মাতৃকক্ষের শৌচালয়ের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ডাকাডাকি করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তখন ওঁদের দরজা ভাঙার কথা বলে পুলিশকে খবর দিই।” হাসপাতালের কর্মীদের দরজা ভাঙার মধ্যে এসে হাজির হয় রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। দরজা ভাঙার পরে উদ্ধার হয় প্রসূতির ঝুলন্ত দেহ।
পুলিশ জানাচ্ছে, সন্তানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন ওই প্রসূতি। তার জেরে মানসিক অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন তিনি। মৃতার মামাতো ভাই জিতেন বাউরিও বলেন,‘‘সন্তানকে আলাদা করে নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করানোর পরেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল দিদি। বারবার সন্তানের কথা জানতে চাইছিল।” তাঁর স্বামী ঝণ্টুবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের কোনও পারিবারিক সমস্যা ছিল না। সন্তানকে নবজাতক কেন্দ্রে ভর্তি করানোর পরে কিছু উদ্বিগ্ন হয়েছিল। তবে তার জেরে আত্মহত্যা করবে, মানতে পারছি না।”
ঘটনা প্রসঙ্গে মনোরোগ চিকিৎসক অরিত্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিশুর জন্মের পরে অনেক সময়ে মায়েদের উদ্বেগ ও মন খারাপের লক্ষণ দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে থেকে ও পরিবারের লোকজনের তরফে উপযুক্ত মানসিক সাহায্য পেলে তা কেটে যায়। কিন্তু কখনও কখনও মন খারাপ খুব বেশি হলে অবসাদ তৈরি হতে পারে। তা থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা আসতে পারে।’’