ইদের কেনাকাটা। উপরে রামপুরহাট, নীচে দুবরাজপুরে। নিজস্ব চিত্র।
খুশির ইদ বলে কথা, সবই যে নতুন চাই। নতুন পোশাক থেকে জুতো, আতর থেকে টুপি, চুরি থেকে নানা প্রসাধন সামগ্রী, পসরা সাজিয়ে তৈরি জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা। টানা দু’বছর কোভিড সংক্রমণ, লকডাউন সামলে ফের জমে উঠেছে বাজার। কেনাকাটা চলছে পুরো দমে । হাতে যে মাত্র তিনটে দিন!
দুর্গাপুজের সঙ্গে ইদের কোথাও একটা যোগ রয়েছে। নতুন প্রজন্ম কোন ধরনের ফ্যাশন চাইছেন, তার একটা আঁচ ব্যবসায়ীরা পেয়ে থাকেন। তবে ফ্যাশন বুঝতে শুধু সিনেমা বা সিরিয়াল নয়, অনলাইন কেনাকাটার প্রবণতার দিকেও নজর রেখেছেন নলহাটি, রামপুরহাট, সিউড়ি, দুবরাজপুর এবং বোলপুরের ব্যবসায়ীরা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, আয়োজনে কমতি নেই তবে বাজার এখনও খুব ভাল নয়। তবে অন্য অংশের মতে, টানা দু’বছরের ক্ষতি সামলে দেওয়ার মতো বাজার এ বার।
দুবরাজপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী শমিম নওয়াজ জানালেন, গত দু’বছরের তুলনায় বাজার ভাল। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে সেটা আরও জমবে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথাগত পছন্দের তালিকায় থাকা পোশাক তো আছেই। বর্তমান প্রজন্মের রুচি অনুসারে হাল ফ্যাশনের নানা পোশাক (বিশেষত মেয়েদের) রাখা হয়েছে। নতুন প্রজন্মের একটা অংশ কেনাকাটা সারছে অন লাইনে। তবে, ফিটিংস নিয়ে সমস্যা বা অন্যান্য কিছু কারণে এখনও অনেকেই দোকানে বা শোরুমে এসে কেনাকাটা করতে পছন্দ করছেন। সেই দিকটা খেয়াল রেখেছি।’’
বোলপুরের একটি বস্ত্রবিপণির মালিক সুশীল আগরওয়াল জানাচ্ছেন, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুয চৈত্র সেলে দেদার কেনা কাটা করেছেন। ইদের বাজারও অনেকাংশে তখনই হয়েছে। এখনও ভিড় রয়েছে। তবে ইদ উপলক্ষে যে ভিড় দেখে অভ্যন্ত তাঁরা, সেটা নেই। সিউড়ির বস্ত্র ব্যবসায়ী প্রদীপ দত্ত বলেন, ‘‘চৈত্র সেলের বাজার জমেনি। ইদেও জমল না। শপিং মলে তা-ও একটু ভিড় হচ্চে কেনাকাটার।’’ রামপুরহাটের বস্ত্র ব্যবসায়ী আনন্দ আগরওয়ালের মতে, জামা-কাপড়ের দাম বাড়ায় অনেক ক্রেতা মুখ ফিরিয়েছেন।
তবে অনলাইনের পরিবর্তে দোকানে গিয়ে পোশাক কিনেছেন বেশির ভাগই। বোলপুরের যুবক আমন আলি বলছেন, ‘‘অনলাইন কেনাকেটায় সুবিধা অসুবিধা দুই আছে। অনেক সময় ছবির সঙ্গে হাতে পাওয়া জিনিস মেলে না। ফিটিংস নিয়েও সমস্যা হতে পারে। সব ব্র্যান্ডের মাপও এক হয় না। ফলে দোকান থেকেই পোশাক কিনেছি।’’ জেলার পোশাক ব্যবসায়ীরা জানালেন, এ বার তরুণীদের মধ্য লং স্কার্ট, লং কুর্তি, ভেলভেটের লং গাউনের চাহিদা বেশি। আবার অনেকেই প্রথাগত বেনারসী, কাঞ্জিভরম, তাঁতশিল্ক বা ঢাকাই জামদানি শাড়ির দিকে ঝুঁকে। দুবরাজপুরের মর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘আমার প্রথগাত পোশাকই পছন্দের। সেটাই কিনেছি।’’ ছেলেদের পছন্দদের মধ্যে টি-শার্ট, ক্যাজ়ুয়াল শার্ট, জিন্স আর পাঞ্জাবি। তীব্র গরমে সুতির পোশাকের উপরেও নজর রয়েছে তরুণ প্রজন্মের।
শুধুই কী পোশাক, ইদের টুপি, আতর, সুরমা জয়নামাজপাটি, বেল্ট, রোদচশমা কিম্বা মেয়েদের চুরি, মেহেন্দী ও অন্যন্য প্রাসাধন সামগ্রীর কী হবে! রামপুরহাটের রাজেশ হোসেন বলছেন, ‘‘আতর, ফেজ টুপি, জয়নামাজ, সুরমা, থেকে মেয়েদের হিজাব বোরখা সব রয়েছে। এ বার বাজার ভীষণ ভাল।’’ সিউড়িতে দীর্ঘদিন ধরে টুপি আতর বিক্রি করেন ফজলুল হক। বলেন, ‘‘সারা বছরে আমরা তাকিয়ে থাকি ইদের বাজারের দিকে। এ বার বিক্রি বেশ ভাল।’’ দু’বছর বাইরে বেরিয়ে ইদ পালনের সুযোগ সেভাবে হয়নি বলে এ বার প্রসাধনী চুরির চাহিদাও বেড়েছে জানাচ্ছেন জেলার ব্যবসায়ীরা।