ফাঁকা: বৃহস্পতিবার বোলপুরে এমনই ছিল তৃণমূল কার্যালয়। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে হতাশা, দীর্ঘশ্বাস। অন্য দিকে উচ্ছ্বাস।
বুধবার সকালে সিবিআইয়ের হাতে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হতেই শাসক ও বিরোধী শিবিরে দু’রকম ছবি। জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ হতাশ। প্রকাশ্যে কেউই অবশ্য মুখ খুলতে চাননি। অনেক নেতাই মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। হঠাৎ যেন শাসক-শিবিরে ছন্নছাড়া, দিশেহারা ভাব। বিভিন্ন পুরসভা থেকে এ দিন যে রাখিবন্ধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, ‘দুঃসংবাদ’পেয়ে সে-সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিরোধী নেতাদের কটাক্ষ, ধর্মের কল বাতাসে দেরিতে হলেও নড়ে, তা প্রমাণিত হল।
আসলে অনুব্রত ছাড়া দলের কী হাল হতে পারে, আগে কেউ ভাবেননি। অনু্ব্রত গ্রেফতার হতেই দলের অন্দরে সে প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতের পদক্ষেপ ঠিক করতে এ দিন বিকেলে দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে করেছেন। জেলা তৃণমূলের অন্দরে চর্চা, আপাতত সংগঠন দেখার দায়িত্ব নাকি কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের হাতে থাকবে। এক নেতার আশঙ্কা, ‘‘দাদার অবর্তমানে তাসের ঘরের মতো দলটা না ভেঙে যায়!’’ যা জেনে বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, ‘‘তৃণমূলের সংগঠন যা কিছু, সবই পুলিশ-নির্ভর। তাসের ঘরের মতো তা ভাঙতে বাধ্য।’’ জেলায় তৃণমূলের সংগঠন ভাঙবে বলে দাবি করছে বামেরাও।
ধ্রুব সাহার সংযোজন, ‘‘অনুব্রতের গ্রেফতারিতেই স্পষ্ট, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবেই। আইনের হাত অনেক লম্বা। আইনকে যাঁরা অন্ধ ভাবছিলেন, তাঁরা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন। সবে কান টানা হয়েছে, এ বার আরও মাথা আসবে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জেলার মানুষ আজ খুশি হবেন। কারণ, অনেক মানুষের চোখের জল, দীর্ঘশ্বাসের কারণ ছিলেন তিনি। আজ থেকে সেই অত্যাচার কমবে।’’ তাঁর দাবি, শুধু গ্রেফতার করলেই হবে না, দ্রুত তদন্ত শেষ করে শাস্তি দিতে হবে। এবং ধরতে হবে অনুব্রতের সঙ্গে জুড়ে থাকা সকলকে। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদের বক্তব্য, ‘‘দলের সহযোগিতায় রাজনীতি করে কোনও মানুষ এত টাকা রোজগার করতে পারে, ধারণা ছিল না। দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি, তৃণমূলের জামানায় গরু-কয়লা-সোনা পাচার— এই কথাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হলাম। এমন পরিণতি হওয়ারই ছিল।’’
রাজনীতির মানুষজন নিজের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু, বীরভূমের আম জনতার চোখও আজ সকাল থেকে ছিল টিভির পর্দায়। বেলা ১১টা নাগাদ অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। কেউ ‘গরু চোর ধরা পড়েছে’ বলে স্টেটাস দেন, তো কেউ লেখেন , ‘খেলা শেষ!’ কেউ কেউ আবার দাবি করেন, পুরোটাই ‘চক্রান্ত’।
তবে কিছু যে ঘটতে চলেছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনেকই তার আঁচ পেয়েছিলেন সোমবার এসএসকেএম অনুব্রতকে ভর্তি না নেওয়ার পরই। তার পরেও সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা না দিয়ে বোলপুরে ফিরে এসে এবং চিকিৎসক দলকে দিয়ে বিশ্রামের কথা লিখিয়ে নিয়ে জেলা সভাপতি ঠিক করেননি বলেই এখন আক্ষেপ কর্মীদের একাংশের। তাঁদের কথায়, ‘‘দাদা বারবার সিবিআইয়ের ডাক উপেক্ষা না করলেই পারতেন। তাহলে অন্তত বলা যেত জিজ্ঞাসাবাদের নামে ডেকে গ্রেফতার করেছে। এখন তা-ও বলার উপায় নেই!’’