প্রতীকী ছবি।
অনলাইন পঠনপাঠনের বাস্তব চিত্রটা কী? সিউড়ি ১ ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা অজয় পুরস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস গড়াই বলছেন, ‘‘অনলাইন ক্লাসে হয়তো ১০ শতাংশ পড়ুয়া কিছু শিখছে। কিন্তু আমার স্কুলের সার্জেন খান, রীতা মাহারা, সুখি হাঁসদা বা দিদিমণি টুডু-র মতো পড়ুয়াদের কোনও লাভ হচ্ছে না এটুকু বলতে পারি। কারণ তাদের কাছে স্মার্টফোন নেই। ক্লাসে ক্লাসে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করেও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু স্কুলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তার সঙ্গে যুক্তই করা যায় নি।’’
‘‘কী করে অনলাইন ক্লাস করব বলুন? আমাদের বাড়িতে না আছে টিভি, না আছে স্মার্টফোন। একটা সাধারণ মোবাইল ফোন আছে। সেটাও আমার দিনমজুর বাবার কাছে থাকে।’’, একটানা কথাগুলো বলছিল খয়রাশোলের বড়রা গ্রামের দশম শ্রেণির ছাত্রী কোয়েল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘অনলাইন ক্লাস হচ্ছে শুনেছি। কিন্তু আমাদের মতো গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের কোনও লাভ হয়নি।’’ প্রায় একই কথা দুবরাজপুরের কুখুটিয়া গ্রামের বৃষ্টি দত্তেরও। সে কুখুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। বৃষ্টি বলে, ‘‘আমার বাবা টোটো চালান। এক মাস ধরে বাবা বাড়িতে। খুব কষ্টে সংসার চলছে। স্মার্টফোন, কেবল টিভি কিছুই নেই আমাদের। অনলাইন ক্লাস করব কী ভাবে?’’ দুই ছাত্রীর থেকে গল্পটা আলাদা নয় পাড়ুইয়ের প্রত্যন্ত এলাকায় দুই পড়ুয়া ফাল্গুনী দাস, স্বাতী লোহারদের। পাড়ুইয়ের ইউনিয়ন আমজাদ স্কুলের দশম শ্রেণিরই পড়ুয়া তারা। তবে সব মিলিয়ে তালিকাটা আরও অনেক লম্বা।
সমস্যার কথা স্বীকার করছেন শিক্ষকরাও। পাড়ুইয়োর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘লকডাউনে স্কুল বন্ধ রয়েছে। এই সময় পড়ুয়াদের সাহায্য করতে অনলাইন ক্লাস জরুরি। কিন্তু বাস্তবে গ্রামীণ পড়ুয়াদের বড় অংশের কাছেই সেটা পৌঁছনো যাচ্ছে না চেষ্টা করেও।’’ দুবরাজপুরের চিনপাই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ মজুমদার বলছেন, ‘‘সত্যিই সমস্যা। রাজ্য শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইট বা টিভিতে ক্লাস করার সময় যে ওয়ার্কশিট দেওয়া হয়েছে, স্কুল খুললে মূল্যায়ণের জন্য সেটা পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছনোই চ্যালেঞ্জ ছিল। মিড-ডে মিলের চাল আলু দেওয়ার সময় অভিভাবকদের হাতে হাতে সেগুলি প্রিন্ট করিয়ে দিতে হয়েছে।’’
শিক্ষকদের একাংশ আরও বলছেন, ‘‘প্রাথমিক থেকে উচ্চ প্রাথমিক উন্নীত পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ এতটাই দুর্বল থাকে যে তাদের ক্লাসের মধ্যেই পড়া বোঝানো যায় না। সেখানে এতদিন বিদ্যালয়ের থেকে দূরে থেকে তারা কী শিখবে?’’ অনলাইনে পারস্পরিক যোগাযোগও অনেক সময়ই করা যাচ্ছে না। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘যদি ধরেও নেওয়া হয় স্মার্টফোন আছে, তাহলেও কতটা লাভ হবে বলা শক্ত। এতদিন ধরে ক্রমাগত বলা হয়েছে মোবাইলের কুফল নিয়ে। এখন সেটাই ভুলতে হয়েছে।’’ টিভিতে ক্লাসেও এক সঙ্গে নবম থেকে দ্বাদশ একসঙ্গে ক্লাস করানো চলছে। অর্থাৎ এক একটি ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য সময় বরাদ্দ হচ্ছে খুবই কম। পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা তাতে কিছু শিখছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।