বাঁকুড়া জেলা পরিষদের অনেক তাবড় পদাধিকারীই হয়তো এ বার নিজেদের আসনে ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। পঞ্চায়েতস্তরে সংরক্ষণের গেরোয় এ বার অনেকের আসনেই কোপ পড়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সভাধিপতি থেকে বিরোধী দলনেতা, অনেক কর্মাধ্যক্ষও।
বুধবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশন ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের আসন ভিত্তিক সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে। তা হাতে আসতেই বৃহস্পতিবার শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সংরক্ষণের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমান বোর্ডের বেশির ভাগ জনপ্রতিনিধিকেই নিজের জায়গা ছাড়তে হচ্ছে। আবার তাঁদের মধ্যে কাকে কাকে দল আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটে লড়ার সুযোগ দেবে, তাও বিবেচনাধীন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের ৪৬টি আসনের মধ্যে ১১টি আসন সংরক্ষণের বাইরে রয়েছে। অসংরক্ষিত আসনগুলি হল, ছাতনা- ৬, খাতড়া- ১৩, রানিবাঁধ- ১৫, সারেঙ্গা- ১৮, বাঁকুড়া ১- ২৪, বাঁকুড়া ২- ২৭, বড়জোড়া- ২৯, ওন্দা- ৩২, বিষ্ণুপুর- ৩৪, ইন্দাস- ৪১ ও পাত্রসায়র- ৪৪। তফসিলি জাতির জন্য ১৫টি (তার মধ্যে আটটি মহিলা), তফসিলি উপজাতির জন্য পাঁচটি (তার মধ্যে দু’টি মহিলা), অনগ্রসর শ্রেণির জন্য তিন (তার মধ্যে একটি মহিলা) ও সাধারণ মহিলাদের জন্য মোট ১২টি আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী গত পঞ্চায়েত ভোটে বাঁকুড়া ১ ব্লকের যে ২৫ নম্বর জেলা পরিষদ আসন থেকে লড়াই করেছিলেন, সেই আসনটি এ বার তফসিলি জাতির (মহিলা) জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। সহ-সভাধিপতি বিভাবতী টুডু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রানিবাঁধের তফসিলি উপজাতির (মহিলা) জন্য সংরক্ষিত ১৫ নম্বর জেলা পরিষদের আসনে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন। সেই আসনটি এ বার সংরক্ষণের বাইরে রয়েছে। কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ, প্রশান্ত মণ্ডল, শেখর রাউত, শ্যামল সরকার (বেনু), জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়েরা গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে আসনে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেছিলেন, সংরক্ষণের কোপ পড়েছে সেখানেও।
রাইপুরের ১৭ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে পর পর দু’টি নির্বাচনে জিতে এসেছিলেন তৃণমূলের শোভা মণ্ডল। এ বার ওই আসনটি তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। সোনামুখীর ৪৫ নম্বর জেলা পরিষদের আসনে দাঁড়িয়ে পর পর দু’বার জিতেছিলেন প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ তথা বর্তমান জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এ বার তাঁর আসনটি তফসিলি জাতির (মহিলা) জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় গড় ছাড়তে হচ্ছে তাঁকেও।
সংরক্ষণের তালিকা দেখে বিরোধী দলনেতা সুব্রতবাবুর প্রতিক্রিয়া, “তালিকা অনুযায়ী অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অনেকেই এ বার বাদ পড়তে পারেন। আগামী দিনে সার্বিক ভাবে জেলা পরিষদের কাজের গতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছি।”
জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক সুকুমার বৈদ্য বলেন, “ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের আসন সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেই তালিকা জেলার পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ বিভিন্ন অফিসে পাঠানো হয়েছে।”