প্লাবিত: দেখা যাচ্ছে শুধু গাছের মাথাটুকু। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের লালপুরের অদূরে। ছবি: সঙ্গীত নাগ
ডিভিসি জল ছাড়ায় রবিবার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ ও নিতুড়িয়ার অন্তত পঞ্চাশ হেক্টর কৃষিজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। সোমবার থেকে জল কিছুটা নামতে শুরু করলেও এখনও অনেকটাই ডুবে।
কৃষি দফতর ও ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, নিতুড়িয়াতে পাঞ্চেত জলাধারের পাশের রায়বাঁধ ও গুনিয়াড়া পঞ্চায়েতের বাথানবাড়ি, ভুরকুন্ডাবাড়ি, কলিপাথর, গোপালচক, ধনিবাড়ি-সহ সাত-আটটি মৌজার অন্তত চল্লিশ হেক্টর জমি জলমগ্ন। নিতুড়িয়ার সহ কৃষি অধিকর্তা পরিমল বর্মন বলেন, ‘‘দফতরের কর্মীরা সরজমিনে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন।’’ রঘুনাথপুর ২ ব্লকে চেলিয়ামা পঞ্চায়েতের করগালি, রামগড়, শ্বেতপলাশ, বড়রা, মুচকুন্দা, লালপুর, গুরুডির মতো ছয়-সাতটি মৌজা জলমগ্ন। ওই ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বর সর্দার বলেন, ‘‘দামোদরের জল ঢুকে দশ হেক্টরের মতো ধানজমি ডুবিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচশোর বেশি চাষি।” কৃষি দফতর জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ‘বাংলা শস্য বিমা যোজনা’ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। মুক্তেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘ইতিমধ্য়েই ধান চাষে ক্ষতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাকে জানানো হয়েছে।”
নিম্নচাপের জেরে এই রাজ্য় ও পড়শি ঝাড়খণ্ডে টানা বৃষ্টি হয়েছে। জল ছাড়া হয়েছে পাঞ্চেত জলাধার থেকে। রঘুনাথপুর ও নিতুড়িয়ার ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, রবিবার দুপুরের পর, নদী ও জলাধারের পাশের জমিতে জল ঢুকতে শুরু করে। তবে লোকালয়ে আসেনি। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, বীজতলা তৈরি করে ধান লাগানো শুরু করেছিলেন চাষিরা। জমি পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ায় সেই বীজতলা পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের লালপুর গ্রামের চাষি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানান, বীজতলা তৈরি করে জমির আলে রেখেছিলেন। সব ভেসে গিয়েছে। গুরুডি গ্রামের চাষি প্রদীপ গোস্বামী এক একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। চিকিৎসার জন্য় বাইরে আছেন তিনি। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘এই অবস্থায় কোনও ভাবেই বীজতলা বাঁচানো যাবে না।”
রবিবার রঘুনাথপুর ২ ব্লকে পরিদর্শনে যান পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘কিছু কৃষিজমিতে জল ঢুকেছে। বিডিওকে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’’ এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দামোদরের পাড় ছাপিয়ে অন্তত পাঁচশো মিটার পর্যন্ত জল এসেছে। তলিয়ে গিয়েছে বড় গাছ। শুধু মাথা দেখা যাচ্ছে। দামোদরের পাড়ে লালপুর ও গুরুডিতে থাকা তেলকুপির দুই দেউলের প্রায় পুরোটাই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। চেলিয়ামার বাসিন্দা লোকগবেষক সুভাষ রায় বলেন, ‘‘বর্ষায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হলেই দেউলগুলির একাংশ জলে ডুবে যায়। তবে এ বার প্রায় সত্তর শতাংশ জলের তলায় চলে গেছে। বহুদিন পরে এমনটা হল।’’