চলতি বছরে বিষ্ণুপুরে পিয়ারডোবা গ্রামে, লেপ্রসি কলোনির বাসিন্দাদের তত্ত্বাবধানে থাকা আম বাগানে ফলন নেই বললেই চলে। নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়ার সুস্বাদু আম্রপালি আমের খ্যাতি রয়েছে দেশ জুড়েই। রাজ্যের আম মেলায় একাধিক বার প্রথম স্থান পেয়েছে বাঁকুড়ার আম। বিদেশের মাটিতেও সাড়া ফেলেছে। কিন্তু এ বার ফলন কমে চিন্তায় জেলার আমচাষিরা।
খাতড়ার খড়িডুংরি গ্রামের আম চাষি রঞ্জিত মান্ডি, পূর্ণচন্দ্র মান্ডি ১০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করতেন। এখন তাঁরা একর প্রতি ১০-১২ হাজার টাকায় ‘লিজ়ে’ ব্যবসায়ীদের জমি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের ওয়াজিদ দফাদার লিজ় নেওয়া জমিতে আম চাষ করে এ বার বিপাকে পড়েছেন। তিনি জানান, গাছে মুকুল আসার আগে বাগানে গাছের অবস্থা দেখে দরদাম করে খড়িডুংরি, সুপুর, মশিয়াড়া, রাইপুর, ফুলকুসমা, রানিবাঁধ, ঝিলিমিলি, সিমলাপাল, তালড্যাংরা, হলুদকানালি-সহ ১২-১৪টির বাগান লিজ়ে নিয়েছেন। কিন্তু কোথাও ভাল ফলন নেই বলে কপাল চাপড়াচ্ছেন।
বিষ্ণুপুরের পিয়ারডোবা লেপ্রসি কলোনিতেও ১৯৯০ সাল থেকে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পর্যন্ত হিমসাগর ল্যাংড়া, আম্রপালির মত বহু রকমের আমের চাষ হয়েছে বলে জানাচ্ছেন রাজীব বাউরি, দীপক চৌধুরী, আশু মাইতি। তাঁরা জানান, গত বছরও ভাল আম চাষ হয়েছে। এ বার ফলন কম। সেখানে প্রায় ২২০০টি আমগাছ আছে। ওই আম বাগানের জন্য লক্ষাধিক টাকার ডাক দিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছেন বর্ধমানের ফল ব্যবসায়ী সেলিম দফাদার। তিনি বলেন, ‘‘গাছে আম ধরেনি। কী করে ডাকের টাকা কলোনির বাসিন্দাদের তুলে দেব, সে চিন্তায় ঘুম উড়েছে।’’ কলোনির লক্ষ্মী মাইতি, আশা কর্মকার, রমলা বাউরি বলেন, ‘‘এক বছর আগের ফলন ভাল হলে, পরের বছর সাধারণত কম হয়। কিন্তু এ বারের মতো অবস্থা কোনও বছর হয়নি।’’
বাঁকুড়া জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক দেবাশিস মান্না বলেন, ‘‘জেলায় মোট ছ’হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়। অন্য বছরের তুলনায় গাছে এ বার মুকুল কম আসায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে।’’ এর কারণ হিসাবে তিনি জানান, মুকুল আসার আগে গাছে যে ধরনের পরিচর্যা নেওয়ার প্রয়োজন, তা না হওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর ৮৫-৯০ শতাংশ ফলন হয়েছে। প্রায় ৮০-৯০ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছিল। ফলন কমে এ বার প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশতে নেমে এসেছে। আগামী দিনে ভাল ফলনের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হবে।’’
তবে চাষিদের একাংশের দাবি, আগে উদ্যানপালন দফতর আম চাষে প্রশিক্ষণ দিত, নানা ভাবে পাশে থাকত। এখন তাদের সে ভাবে পাশে পাওয়া যায় না। সেই সক্রিতয়তা কমে গিয়েছে। যদিও উদ্যান পালন দফতরের দাবি, চাষিদের সঙ্গে তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। কী ভাবে ভাল ফলন হবে তার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও চাষিরা ঠিক মতো পরিচর্যা না নেওয়ায় চাষের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।