কাজু তুরি। নিজস্ব চিত্র
স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির জেরে শ্বশুরবাড়ি থেকে মাঝরাতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন যুবক। ‘মত্ত’ অবস্থায় গালিগালাজ করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন তিনি। অভিযোগ, ওই পাড়ারই এক বাসিন্দা তাঁদের গালিগালাজ করা হচ্ছে মনে করে চড়াও হন ওই ব্যক্তির উপরে। মারধরও করা হয়। কিছুক্ষণ পরে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির। পরে মৃত কাজু তুরির (৩২) পরিবারের স্ত্রী দুর্গা তুরি সোনু দুবে নামে ওই ব্যক্তির নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযুক্তের বাড়ির বাইরে পুলিশের পাহারা রয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের বাড়ি বোলপুরের ছ’নম্বর ওয়ার্ডে। সোমবার কালীপুজো উপলক্ষে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে গুসকরার পশ্চিম খয়রাপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন তিনি। দুর্গাদেবীর অভিযোগ, সন্ধ্যায় সকলে মিলে ধারাপাড়ায় দিদির বাড়িকে কালীপুজোয় গিয়েছিলেন তাঁরা। রাত ১০টা নাগাদ খয়রাপাড়ায় ফেরেন। অভিযোগ, রাত ১২টা নাগাদ ফের শ্যালিকার বাড়িতে যাওয়ার কথা বলেন কাজু। কিন্তু দুর্গাদেবী ও পরিবারের অন্যেরা তাঁকে যেতে নিষেধ করেন। অভিযোগ, কারও কথা না শুনে মাঝরাতে চিৎকার করতে করতে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে যান পেশায় টোটোচালক ওই ব্যক্তি।
ওই বাড়ি থেকে ফুট পঞ্চাশেক দূরেই সোনু দুবে ওরফে রাজেশের বাড়ি। অভিযোগ, কাজুর অশালীন কথাবার্তা শুনে তাঁরা মনে করেন তাঁদের গালিগালাজ করা হচ্ছে। এর পরেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাল্টা ‘মারধর’ শুরু করেন তাঁরা। দুর্গাদেবীর অভিযোগ, দেওয়ালে ঠেসে ধরে গলায়, বুকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারা হয়। তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন ছাড়াতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। কোনও রকমে কাজুকে ঘরে নিয়ে যান তিনি। দুর্গাদেবীর বোন পূজা বলেন, ‘‘কিছুক্ষণ পরেই জামাইবাবুর বুকে ব্যথা শুরু হয়। গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে জানান ডাক্তারেরা।’’
সকালে ঘটনার কথা চাউর হতেই গোলমাল শুরু হয় এলাকায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, হঠকারিতার জেরে এক জনের প্রাণ চলে গেল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পরে দুর্গা তুরি গুসকরা ফাঁড়িতে অভিযোগ করেন। পুলিশের দাবি, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
মঙ্গলবার সকালে কাজু তুরির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পাড়া পড়শিদের ভিড় করেছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতের মা তিকনি তুরি। মৃতের দাদা গোপি তুরি বলেন, ‘‘যাঁরা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা চাই তাঁদের যেন চরম শাস্তি হয়।’’