মঞ্জুশ্রী দাস মহন্ত। নিজস্ব চিত্র
পরপর দু’টি কন্যা সন্তান। প্রথম সন্তানের পর থেকেই অত্যাচার শুরু হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল দ্বিতীয়টি অন্তত পুত্র হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় মারধর করে ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে নলহাটির ভদ্রপুরের বাসিন্দা মঞ্জুশ্রী দাস মহন্তকে (২৭)। রবিবার নলহাটি থানায় এই মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন মঞ্জুশ্রীর মা কল্পনা দাস গোস্বামী। পুলিশ মঞ্জুশ্রীর স্বামী নয়ন মহন্তকে রবিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে দুই মেয়ের কান্নার আওয়ার পেয়ে মঞ্জুশ্রীদের বাড়িতে যান প্রতিবেশীরা। ঘরের মধ্যে ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় মঞ্জুশ্রীকে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হালপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। ২০০৯ সালে নলহাটির ভদ্রপুর গ্রামের নয়নের সঙ্গে বিয়ে হয় মুরারইয়ের মঞ্জুশ্রীর। তাঁদের দু’টি কন্যা সন্তান আছে। বড়টির বয়স ন’বছর আর ছোটটি পাঁচ বছরের। অভিযোগ, প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় শ্বশুর ও শাশুড়ি মঞ্জুশ্রীর উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। দ্বিতীয় সন্তানও মেয়ে হওয়ায় অত্যাচারের মাত্রা বাড়ে। এরপরে পুত্র সন্তানের জন্য চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন তাঁরা। এই নিয়ে অশান্তি বাড়তে থাকে। সম্প্রতি দুই মেয়েকে শ্বশুর, শাশুড়ির কাছে রেখে বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল মঞ্জুশ্রীকে। শুরু হয়েছিল মারধর। নয়নও মারধরে সামিল হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মেয়েদের ক্ষতি হতে পারে এই আশঙ্কায় মঞ্জুশ্রী যেতে চাননি এমনটাই দাবি কল্পনাদেবীর। কল্পনাদেবী বলেন, ‘‘মেয়ে প্রায়ই ফোন করে অত্যাচারের কথা বলত। শনিবার দুপুরেও জানায় তাঁকে মারধর করা হচ্ছে বলে। এরপরেই ফোন কেটে যায়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে
ফোনে জানানো হয় আমার মেয়ে আর বেঁচে নেই।’’
এরপরেই খোঁজখবর করে কল্পনাদেবী ও অন্য আত্মীয়েরা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে জানতে পারেন মৃতদেহ মর্গে রাখা আছে। রবিবার সকালে কল্পনাদেবী নলহাটি থানায় মঞ্জুশ্রীর শ্বশুর ত্রিলোচন মহন্ত, শ্বাশুড়ি লতিকা মহন্ত, স্বামী নয়ন ও বাপন দাস নামে আরেক আত্মীয়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ধারায় মামলা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’