আলোচনা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্য গ্রামোন্নয়ন দফতরের চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল, সাংসদ শতাব্দী রায় প্রমুখ। নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কাজ না করলে আন্দোলনে নামতে, প্রয়োজনে ঘেরাও করতে দলীয় বিধায়ককে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় সড়কের কাজের দায়িত্ব যে কেন্দ্রীয় সরকারের, তা স্পষ্টভাবে জানিয়েই এই আন্দোলন করার কথা বলেন তিনি।
সোমবার বোলপুরে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশচন্দ্র বাউড়ি অভিযোগ করেন, ১০ বছর কাটলেও ঘিঞ্জি শহর দুবরাজপুর এড়িয়ে এখনও বাইপাস তৈরি করেনি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সেই অসুবিধার কথা তুলতেই মুখ্যমন্ত্রী বিধায়ককে প্রথমে বলেন, ‘‘এটা তো আমাদের হাতে নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। ওরা কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটেও তাই করেছে। জমি দেওয়া সত্ত্বেও। এটা ইচ্ছাকৃত।’’
তার পরই মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘ওই রাস্তায় ভাল করে পোস্টার লাগাবে। সেখানে লেখা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই রাস্তা কেন্দ্রীয় সরকার করছে না কেন জবাব দাও। না করতে পারলে রাজ্যকে দিন আমরা করে দেব।’’ একটু থেমে বিধায়ককে তিনি বলেন, ‘‘মিটিং মিছিল করে আওয়াজ তোলো। প্রয়োজনে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের যিনি আছেন তাঁকে ঘেরাও করো। বলো বাইপাস করে দিন, নয়তো দায়িত্ব আমাদের হাতে দিন।’’
দুবরাজপুর শহর এড়িয়ে ‘ফোর লেন বাইপাস’ হওয়ার কথা বোলপুরে মুখ্যমন্ত্রী পরে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২০১৬ সালেই সামনে এসেছিল। যানজটে নাকাল শহরবাসী আশ্বস্ত হয়ে ভেবেছিলেন অবশেষে সমস্যা মিটতে চলেছে। কিন্তু তারপর চার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও বাইপাস হচ্ছে এমন কোনও ইঙ্গিত সামনে আসেনি। দুবরাজপুর পুরসভা সূত্রে খবর, যে জমির উপর বাইপাস হবে, সেই প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াই শুরু করেনি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। নিত্য যানজটে নাকাল শহরবাসী চরম বিরক্ত।
২০০৬ সালে জাতীয় সড়কের তকমা পায় খড়্গপুর থেকে রানিগঞ্জ হয়ে মোরগ্রাম পর্যন্ত এই রাস্তাটি। ঘিঞ্জি দুবরাজপুর শহরের মধ্যে যাওয়া রাস্তাটি তুলনায় ভাল হওয়ায় এবং রাস্তা সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে দুর্গাপুর-পানাগড় না ঘুরে সহজেই উত্তর ভারত, ঝাড়খণ্ড, বিহার থেকে আসা উত্তরবঙ্গ বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে যাওয়ার জন্য আসানসোল থেকে এগিয়ে এসে রানিগঞ্জে এসে এই রাস্তায় ঢুকে পড়ে বহু গাড়ি, পণ্যবাহী যান। এতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে দুবরাজপুর শহরে।
শহরের সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়ে দিনরাত পণ্যবোঝাই লরি, পাথর বা কয়লা বোঝাই ডাম্পারের সঙ্গে সঙ্গে অন্য গাড়ি চলাচল প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। যানজট, ছোটবড় দুর্ঘটনা নিত্য সমস্যা। এখন হেতমপুর দিয়ে একটি রাস্তা একমুখী করে ভারী গাড়ি পারাপার করার চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাইপাস না হলে সমস্যা মেটা সম্ভব নয়। চার বছর আগেই তার নীল নকশা ও কতগুলি নির্মাণ ভাঙা যাবে সব পরিকল্পনা হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণে জেলা প্রশাসন সহায়তা করবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু সেটা পরিকল্পনা স্তরেই রয়ে গিয়েছে।
দলনেত্রীর এ দিনের নির্দেশের পর নরেশ বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে বাইপাসের দাবিতে জোরালো আন্দোলনে নামবে দল। যাতে শহরবাসীর দুর্দশা ঘোচে।’’