নাগালে: বাঁকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কারকডাঙা গ্রামে মঙ্গলবার বিকেলে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে পুরুলিয়ায় এসে উপুড়হস্ত হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন এক গুচ্ছ প্রকল্পের ১০৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ২৬৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ঘোষণা করেন উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা পরিকল্পনাও।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর
ডানকুনি থেকে রঘুনাথুপর পর্যন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর তৈরির কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার কোটশিলায় প্রশাসনিক জনসভার মঞ্চে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাই রঘুনাথপুরে ভাল কাজ হোক। আরও বেশি শিল্প তৈরি হোক।’’
রাজ্যের শিল্পায়নের অন্যতম মুখ হিসাবে সরকার রঘুনাথপুরকে তুলে ধরতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবার জেলা সফরে এসে রঘুনাথপুরের বিষয়ে কথা বলেছেন। সম্প্রতি সেখানে ডিভিসি একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছে। উৎপাদনও শুরু হয়ে গিয়েছে। নিতুড়িয়াতে সিমেন্টের বড় কারখানা তৈরির জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা জমি কিনতে শুরু করেছে। ডিভিসি-র প্রকল্পের পাশে সিমেন্ট কারখানার জন্য আরেকটি বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়া হয়েছে।
রঘুনাথপুরের এক দিকে আসানসোল, অন্য দিকে ধানবাদ। দুই রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলের মাঝে এই শিল্পাঞ্চলের অবস্থান। পাশেই পাঞ্চেত জলাধার। রয়েছে ইসিএল-এর দু’টি কয়লাখনি। ডানকুনি থেকে বাঁকুড়া হয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর তৈরি হলে জেলায় শিল্পের বিকাশে সুবিধা হবে বলে মনে করছে প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, রঘুনাথুপরে ইতিমধ্যেই দু’টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হাতে তিন হাজার একরের কিছু বেশি জমি রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর হলে শিল্পপতিরা আগ্রহী হবেন বলে মনে করছে প্রশাসন। সে ক্ষেত্রে জমি পাওয়া নিয়েও কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি করা হয়েছে।
এয়ারপোর্ট
পুরুলিয়াতে বিমানবন্দর তৈরির কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে, পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তায় ছড়রায় একটি পরিত্যক্ত বিমান বন্দর রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেখানে জ্বালানি ভরতে বিমান ওঠানামা করত। দীর্ঘ দিন পরিত্যক্ত অবস্থায় বিমান বন্দরটি পড়ে রয়েছে। ২০০৩-২০০৪ সালে বামফ্রন্ট সরকার সেটি চালু করতে এক বার উদ্যোগী হয়। দেখা যায়, ওই জমি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা দফতরের আওতায় রয়েছে। বিধায়ক নেপাল মাহাতোর উদ্যোগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের থেকে রাজ্য সরকারের কাছে জমিটি হস্তান্তরিত হয়। কিন্তু কাজ এগোয়নি। ২০০৮-২০০৯ নাগাদ আরও এক বার বিমান বন্দর চালুর উদ্যোগ হয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রাও কিছু হয়নি। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১১-১২ সালে একবার এই নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় জেলার শিল্প মহল খুশি।
শিল্পের সম্ভাবনা
এ দিন কাশীপুর থেকে ঘাট রাঙামাটি পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করার কাজের শিলান্যাস করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই রাস্তার অনেকটাই অহল্যাবাই রোড নামে পরিচিত। সরাসরি বাঁকুড়া হয়ে দুর্গাপুর গিয়েছে ওই রাস্তা। পাশে সমান্তরাল ভাবে গিয়েছে আদ্রা-মেদিনীপুর রেল লাইন। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়, অহল্যাবাই রোডের দু’পাশে প্রচুর ফাঁকা জমি রয়েছে। জলের ব্যবস্থাও রয়েছে। রেল লাইন কাছে থাকায় সুবিধা আছে যোগাযোগের। রেল লাইনের উল্টো দিকে শুরু হচ্ছে রঘুনাথপুর শিল্পাঞ্চল। এই সমস্ত সুযোগ সুবিধার ফলে ওই এলাকায় শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘এই এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’