—প্রতীকী চিত্র।
নামী সংস্থার একই স্বর্ণবিপণিতে ক্রেতা সেজে ঢুকে কয়েক কোটি টাকার অলঙ্কার লুটের ছক কষা হয়েছিল ভিন্রাজ্যের জেলে বসে। যিনি সেই ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিলেন সেই রবি গুপ্তকে রাজ্যে নিয়ে এল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবি বিহারের পটনার দেওর জেলে ছিলেন। সেখানে বসেই পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়ায় ডাকাতির ছক কষেছিলেন তিনি। বিহারেও তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা ঝুলছে।
গত ২৯ অগস্ট, মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় যখন ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে, ওই সময় নদিয়ার রানাঘাটে ওই একই সংস্থার স্বর্ণবিপণিতেও ডাকাতি হয়েছে। দুই ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকলেও থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করেছিলেন তদন্তকারীদের একাংশ। পরে তদন্ত যত এগোয়, পুরুলিয়ার ঘটনায় পড়শি রাজ্য বিহার ও ঝাড়খণ্ডের যোগসাজশ প্রকট হতে থাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নামোপাড়া সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা ঝাড়খণ্ডের দিকেই গিয়েছে। জেলা পুলিশের একটি দল গিয়েওছিল পড়শি রাজ্যে। সেই ঝাড়খণ্ড থেকেই গ্রেফতার হয়েছেন করণজিৎ সিংহ সিধু। ওই ঘটনায় পরে ওমপ্রকাশ নামে আর এক জনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার পুলিশ জানিয়েছে, ওমপ্রকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং অন্যান্য সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জেলবন্দি রবির সম্পর্কে জানা গিয়েছিল। তার পরেই দেওর জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। রবিকে গ্রেফতার করে রাজ্যে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয় তখন থেকে।
—নিজস্ব চিত্র।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিকে রাজ্যে নিয়ে আসার কাজটি একেবারেই সহজ ছিল না। কারণ, জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রবির ‘ভাল’ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তার পরেও তাঁকে গ্রেফতার করে রাজ্যে নিয়ে আসা বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন জেলা পুলিশ কর্তারা। পুলিশ সুপার জানান, পুরুলিয়ার আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে পঞ্চমীর দিন অভিযুক্তকে ট্রানজ়িট রিমান্ডে আনা হয়। বিহারের আদালত থেকেও ছাড়পত্র মিলেছিল। সব কাগজপত্র ঠিক ছিল বলেই রবিকে পুরুলিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতেও পাওয়া গিয়েছে। অভিজিতের কথায়, ‘‘মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জেলায় নিয়ে আসা একটা বড় সাফল্য। এটা পুরুলিয়াবাসীর জন্য পুজোর উপহার। রবি গুপ্তকে জেরা করে আরও অনেক তথ্য উঠে আসবে বলেই আমরা মনে করছি।’’
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাতির দিন দুয়েক আগে নামোপাড়ার স্বর্ণবিপণিতে এসে গয়না বেছে অগ্রিম দিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তাই, ‘অপারেশন’ সারতে তারা যখন দোকানে ঢোকে, প্রথম দুই দুষ্কৃতীকে দোকানের কর্মীরা সন্দেহের চোখেই দেখেননি। আর সেই সুযোগেই মিনিট কুড়ি-বাইশের মধ্যে লুটপাট সেরে কার্যত বিনা বাধায় চম্পট দেয় অপরাধীরা। শহরের বিভিন্ন রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ফুটেজে দেখা গিয়েছে, পালানোর সময় একটি বাইকে তিন জন যাচ্ছিলেন। তাদের সঙ্গে বড় ব্যাগ ছিল। তদন্তকারীদের ওই সূত্র জানিয়েছে, রবিদের এই চক্রের ‘নেটওয়ার্ক’ গোটা দেশেই ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন প্রান্তে ডাকাতিও করেছে তারা। এ রাজ্যের হুগলির চন্দননগর এবং উত্তর ২৪ পরগনার দমদমেও অতীতে তারা ডাকাতি করেছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই চক্রে তিনটি দল রয়েছে। একটি দল দেখে, কোথায় ডাকাতি করা হবে। অর্থাৎ, দোকানের খোঁজ দেওয়া তাদের কাজ। তারাই রেইকি করে। দ্বিতীয় দলের কাজ মোবাইল-সহ অন্যান্য প্রযুক্তি সাহায্য প্রদান করা। আর তৃতীয় দল সরাসরি দোকান লুটের সঙ্গে জড়িত থাকে।
পুরুলিয়ার সঙ্গে রানাঘাটের ডাকাতির ঘটনার যোগসূত্রেরও হদিস মিলেছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাট শহরের মিশন রোডের পাশে থাকা গয়নার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ওই দিনই পাঁচ দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন কুন্দন সিংহ ওরফে ‘ফাইটার’। গ্রেফতারির পর তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এ রাজ্যে একাধিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কুন্দনই দুর্গাপুরের কয়লা কারবারি রাজু ঝা খুনের মূল চক্রী। পুলিশ সূত্রে খবর, গাঁজা এবং হেরোইনে আসক্ত কুন্দন মূলত নেশার টাকা জোগাড় করতেই ‘শুটার’ হন। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশের একটি খুনের ঘটনাতেও তাঁর নাম উঠে এসেছিল।