হিমঘরের পথে। নিজস্ব চিত্র
করোনা আবহে দুর্গাপুজো করা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পুজো কমিটির সদস্যেরা। শেষমেশ সরকারি নিয়ম মেনে পুজো করার অনুমতি মিলেছে। দিকে দিকে এখন চলছে পুজোর প্রস্তুতি। দুর্গাপুজোর অন্যতম উপাচার পদ্মফুল সংরক্ষণ শুরু করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পদ্মফুলের চাষ হয়। তার উপরে নির্ভর করে অনেকের সংসার। শনিবার সিমলাপালের পুখুরিয়া (রেঙুরবাঁধ) বাসস্টপে দেখা গেল, কয়েক জন ব্যবসায়ী পুকুর থেকে তুলে আনা পদ্ম তারকেশ্বরগামী একটি বেসরকারি বাসে তুলছিলেন। তাঁরা জানান, আরামবাগ এলাকার একটি আনাজের হিমঘরে পদ্মফুল সংরক্ষণের জন্য তাঁরা পাঠাচ্ছেন।
তাঁদের মধ্যে পুখুরিয়া গ্রামের বাউল মাহাতো বলেন, ‘‘এ বার পুজোর সময় পিছিয়েছে প্রায় এক মাস। ইতিমধ্যে শীতের বাতাস বইতে শুরু করেছে। এই আবহাওয়া থাকলে পদ্ম হবে না। ফলে,, সেই সময়ে পুকুরে টাটকা পদ্ম ফুল পাওয়া কঠিন হতে পারে। সে জন্য হিমঘরে পদ্মফুল সংরক্ষণ করে রাখছি।’’
খাতড়া রবীন্দ্র সরণি সর্বজনীন পুজো কমিটির সদস্য কৌশিক মল্লিক বলেন, ‘‘পুজো হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল। অনুমতি মেলায় পদ্ম ফুলের জন্য আগাম বায়না দেওয়া হয়েছে।’’ খাতড়া রাজাপাড়া মোড় সর্বজনীন পুজো কমিটির সভাপতি হরেকৃষ্ণ সিংহ বলেন, ‘‘পদ্ম পেতে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য আমরা ২০০ পদ্মের আগাম বায়না দিয়ে রেখেছি।’’
বাউলবাবু জানান, তিনি ১০টি পুকুর ‘লিজ’ নিয়েও পদ্মের জোগান কতটা দিতে পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। অগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভাল পদ্ম ফুটেছিল। কিন্তু করোনা আবহে পুজোর আয়োজন করা নিয়ে সংশয় থাকায় তখন তিনি ফুল সংরক্ষণ করেননি। কারণ হিমঘরে ফুল সংরক্ষণের খরচ কম নয়। এখন পুজো করার অনুমতি মেলায় চাহিদা থাকলেও অত পদ্মের জোগান দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাউলবাবুর মতো অনেক পদ্ম ফুলের ব্যবসায়ী।
মন্মথ মাহাতো নামে আর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ছ’টি পুকুর লিজে নেওয়া আছে। ফি বছর ঘাটাল, তারকেশ্বর, কোলাঘাট, পুড়শুড়ার সোদপুর, আরামবাগের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পদ্ম নিতেন। এ বার কেউ যোগাযোগ করেননি। নিজেরাও সংরক্ষণ করিনি। এখন তাঁরা পদ্ম চাইছেন। তার উপরে এলাকার ছ’টি পুজো কমিটিকে ৩০০ করে ফুল দেওয়ার জন্য বায়না নিয়ে রেখেছি। এ ছাড়া, মানতের ফুলের বায়নাও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার পদ্ম লাগবে। কী ভাবে জোগান দেব, চিন্তায় পড়েছি। যেটুকু পাচ্ছি, সেটাই হিমঘরে পাঠিয়ে জমা করছি।’’