সচেতনতা: নাটকের একটি মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
চিত্র-১: গোঁ ধরে বসে রয়েছেন বিপিন খুড়ো। কিছুতেই ভোট দিতে যাবেন না। ‘ভোট দিয়ে ছেইল্যা-পেইল্যার চাকরি হবেক?’ প্রশ্ন করছেন খুড়ো। তাঁকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রামেরই লেখাপড়া জানা যুবক রাকেশ। খুড়োকে বলছেন, ‘ভোট দেওয়া নাগরিক অধিকার। যাঁকে যোগ্য মনে হবে, তাঁকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাও’।
চিত্র ২: ‘ভোট দিয়ে কী হবে?’ রাকেশকে প্রশ্ন ছুড়লেন গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি ভাদরি মাহাতো। রাকেশ কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই ফের ভাদরির প্রশ্ন, ‘আমার ভোট আমার পছন্দের প্রার্থী পাচ্ছে, তার গ্যারান্টি কোথায়’। রাকেশ তাঁকে বললেন, ‘‘সেই জন্যই তো নির্বাচন কমিশন এবার ভিভিপ্যাটের ব্যবস্থা করেছে। তুমি কাকে ভোট দিলে সেটাই দেখা যাবে।’’
বাস্তব ঘটনা নয়। এই দুই চিত্র ‘ভট-পরব’ নাটকের অংশ। ভোটদাতাদের বুথমিখি করতে এই নাটকের প্রদর্শন চলছে পুরুলিয়ার গ্রামে-গঞ্জে। ‘পরবে’র অর্থ উঠসব। আর গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব বলতেই বোঝায় ভোটকে। উচ্চারণের তারতম্যে যা জেলার অনেক জায়গাতাই বদলে হয়ে যায় ‘ভট’। তাই লোকসভা নির্বাচনে ভোটদান বাড়াতে নাটকের এমন নামকরণ বলে জানাচ্ছেন নাট্যকার সুদিন অধিকারী।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সুদিন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৪২ জায়গায় নাটকটি প্রদর্শিত হয়েছে। ১৭০ জায়গায় নাটকটি প্রদর্শনের লক্ষ্য স্থির করেছেন তিনি। নিজেও একটি চরিত্রে অভিনয় করছেন সুদীন। তিনি বলেন, ‘‘ভোট নিয়ে মানুষকে সচেতন করতেই এই নাটক। গ্রামের বেকার যুবক, চাষি, ঝুমুরশিল্পী, প্রবীন গ্রামবাসী, প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক, এরকম পাঁচটি চরিত্র রয়েছে নাটকে।’’ বেকায় যুবর চরিত্রের নাম রাকেশ। কলেজ ছাত্র রাকেশ নাটকে এক ‘প্রাইভেট টিচার’।
ভোট পেতে অর্থের প্রলোভন কোনও নতুন অভিযোগ নয়। নাটকে উঠে এসেছে সেই প্রসঙ্গও। এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ভোটের আগে দুশো টাকা আর রিকশ পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার ভোটাধিকার বিক্রি করব নাই। অমন টাকা আমি কড়চে (কোমরে) গুঁজে রাখি। এটা (কাকে ভোট দেব সেটা) আমার অধিকার।’
‘কেন ভোট দেব’ বা ‘ভোট দিয়ে চাকরি মিলবে নাকি’— এমন বহু প্রশ্ন উঠে এসেছে নাটকের বিভিন্ন চরিত্রের মুখে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে দেখা যাচ্ছে রাকেশকে। খড়োকে রাকেশ বলছে, ‘ভোট দিলেই চাকরি দিবেক, তা কোথায় লেখা আছে?
নাটকে প্রাক্তন কলেজ শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করছেন সুদীনবাবু। নাটকে দেখা যাচ্ছে, সুদীনবাবু ভোট দিতে যাবেন কি না, সেই প্রশ্ন তাঁকে করছেন তাঁরই এক ছাত্র। উত্তরে প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক বলছেন, ‘নারে, এবারে শরীরটা বেশ বাগে নেই। বুথে যেতে পারব না। দেখছিস তো ক্রাচ নিয়ে হাঁটা-চলা করছি।’ এরপর ছাত্রের মন্তব্য, ‘স্যার আপনিই তো আমাদের শিখিয়েছিলেন যে, ভোটাধিকার অবশ্যই প্রয়োগ করবি। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন তো আপনাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও করেছে।’’
গ্রামে-গঞ্জে ভালই ভিড় টানছে ‘ভট-পরব’। সুদিন বলেন, ‘‘হাটে-বাজারে, গাঁয়ের মোড়ে, সব জায়গাতেই আমরা ‘শো’ করছি। মঞ্চ বা আলোর প্রয়োজন নেই। দরকার বলতে মাইক আর মেকআপ। ওই সব সঙ্গেই থাকছে।’’ নাটকটি দেখেছেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘নাটকটি দেখেছি। ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা রয়েছে সেখানে।’’