জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো।
পঞ্চায়েত ভোটে পুরুলিয়ার যে ক’টি এলাকায় তারা সাফল্য পেয়েছে, সেই বাঘমুণ্ডি, বলরামপুর ও জয়পুর বিধানসভার দায়িত্বে থাকা জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোকেই প্রার্থী করল বিজেপি।
জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান, পঞ্চায়েত ভোটে ওই সাফল্যের পুরস্কার হিসাবেই লোকসভা ভোটের টিকিট পেয়েছেন বিজেপির অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময়বাবু। সেই সঙ্গেই তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, একই সঙ্গে মাহাতো তাসের উপরে আস্থাও রাখা হল।
পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি কাকে প্রার্থী করছে, গত কয়েক দিন ধরে তা নিয়ে জল্পনা ছিল তুঙ্গে। অবশেষে শনিবার দুপুরে নয়াদিল্লি থেকে আসে সেই খবর। গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলার একাধিক ব্লকে বিজেপি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে উঠে আসায় এ বার বিজেপি কাকে প্রার্থী করছে, সে দিকে নজর ছিল সব মহলেরই। দল সূত্রের খবর, এই আসনে প্রার্থী হতে চেয়ে ১০২ জন আবেদন জমা করেছিলেন। প্রতিদিন বিভিন্ন সূত্র থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে একাধিক নাম ভেসে উঠছিল। শনিবার সকালেও দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী-সহ বিভিন্ন নেতৃত্বকে কর্মীদের কাছে শুনতে হয়েছে সেই এক প্রশ্ন—কে প্রার্থী হচ্ছেন? জ্যোতির্ময়বাবুকেও শুনতে হয়েছে একই প্রশ্ন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দল যে তাঁকেই প্রার্থী করেছে সে কথা জ্যোতির্ময়বাবু জানতে পারেন দুপুরের পরে। জেলা সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় কর্মসমিতির সদস্য বিপি সিংহ দেওয়ের সঙ্গে এ দিন বিকালে কাশীপুর ব্লকের সোনাথলিতে একটি দলীয় কার্যালয়ের দ্বারোদ্ঘাটনে যাচ্ছিলেন জ্যোতির্ময়বাবু। পথেই খবর পান, দল তাঁকেই টিকিট দিচ্ছে।
ঝালদা ১ ব্লকের পুস্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতরাডি গ্রামের বাসিন্দা জ্যোতির্ময়বাবুর রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্র সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদে’। ঝাড়খণ্ডের রাঁচী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলা বিভাগের স্নাতক জ্যোতির্ময়বাবু সেই রাজ্যে এই ছাত্র সংগঠনে কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর। স্নাতক হওয়ার পরেও পড়শি রাজ্যে ছাত্র সংগঠনের কাজকর্ম দেখতেন। পরে জেলায় ফিরে দলের যুব মোর্চার কাজ দেখতেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হন। জয়ী হননি।
১৯৮৬ সালে নিতান্ত চাষি পরিবারে জন্ম জ্যোতির্ময়বাবুর। কৈশোর থেকেই গেরুয়া রাজনীতি তাঁকে টানত। তাঁর কথায়, ‘২০০০ সাল থেকে সঙ্ঘ পরিবারের আদর্শ মেনে কাজ করে যাচ্ছি। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদে কাজ করেছি। পরে ২০১০ সালে দলে আসি।’’ তিনি প্রার্থী হওয়ার পরে বলেন, ‘‘দলের সমস্ত স্তরের কর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পুরুলিয়ার মানুষ বর্তমান অবস্থার বদল চাইছেন।’’
জ্যোতির্ময়বাবু বর্তমানে জঙ্গলমহলের বাঘমুণ্ডি, বলরামপুর ও জয়পুর— এই তিন বিধানসভায় দলের হয়ে দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। উল্লেখ্য, শূন্য থেকে শুরু করে এই তিনটি বিধানসভাতেই গত পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করেছে বিজেপি। পাশাপাশি তিনি দলের জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দলের একাংশ মনে করছেন, প্রথমত মাহাতো অর্থাত কুড়মি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, অন্যদিকে দলের মূল স্রোতে থাকা পঞ্চায়েত ভোটের সাফল্যের পুরস্কারের ফর্মূলা কাজ করেছে তাঁর টিকিট প্রাপ্তিতে।
দলের জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা তৈরিই রয়েছেন। আমরা বলেছিলাম প্রার্থী যিনিই হোন, তাঁকে জেতাতে কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। প্রার্থী ঘোষণা ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’