ফাঁকা হোটেলে চলছে স্যানিটাইজ় করার কাজ। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
ভরা শ্রাবণে ভরে থাকে বক্রেশ্বরের লজ-হোটেল ব্যবসা। এখন আক্ষরিক অর্থেই সেখানে লকডাউন। ব্যবসায়ীদের কেউ কাটছেন কেবল লাইন, কেউ টেলিফোন লাইন। পকেট থেকে ভর্তুকি দিয়ে আর ক’দিন প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা সম্ভব সেই নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় মালিক পক্ষ।
জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বক্রেশ্বর মন্দির। বক্রেশ্বরের উষ্ণপ্রস্রবণ সারা দেশ খ্যাত। সারা বছর পূর্ণার্থীরা এসে থাকেন এই পর্যটন কেন্দ্রে। বক্রেশ্বরের লজ এবং হোটেল ব্যবসায়ীদের দাবি, সারা বছরের মধ্যে মূলত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস অর্থাৎ শীতকালে প্রচুর মানুষ এসে থাকেন। আকর্ষণের কেন্দ্রে অবশ্যই এখানকার উষ্ণপ্রস্রবণ কেন্দ্র। এই বছরও সেই ভিড় ছিল। কিন্তু, মার্চ মাস থেকে লকডাউন শুরু হতেই হোটেল লজ সব বন্ধ হয়ে যায়৷ সেই থেকে লোকসান চলছেই।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লকডাউন চলাকালীন স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটকদের দেখা মেলেনি। এখন নির্দিষ্ট দিনে হোটেল-লজ খুলে গেলেও পর্যটকের দেখা নেই। এখন শ্রাবণ মাসের প্রত্যেক সোমবার মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছে। তাছাড়া বাকিদিনগুলি মন্দির খোলা থাকলেও সেখানে ভক্তের দেখা নেই বললেই চলে। বক্রেশ্বরের হোটেল এবং লজ ব্যবসায়ীদের দাবি, শীতকাল বাদে প্রত্যেক বছর শ্রাবণ মাসে তাঁদের ভাল ব্যবসা হয়। কারণ, প্রত্যেক সোমবার জেলা, ভিন্ জেলা এবং ভিন্ রাজ্য থেকেও প্রচুর মানুষ জল ঢালতে মন্দিরে আসেন। করোনা কালে সেই সবই বন্ধ।
হিসেব বলছে, অন্য বছর শ্রাবণ মাসে প্রায় প্রত্যেক দিন হোটেলের পাঁচ থেকে ছ’টি রুম ভাড়া নেওয়া হত। কিন্তু, এই বছর মাসে হয় তো দশ দিন লজে লোক আসছেন তাও খুব বেশি হলে দুই থেকে তিনটি রুম ভাড়া হচ্ছে। বক্রেশ্বরের লজের মালিক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রকম চলতে থাকলে আর ক’দিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব তা জানা নেই।’’ আর এক লজ মালিক বামদেব আচার্য বলেন, ‘‘পকেট থেকে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। অনেক দিনের পুরনো প্রতিষ্ঠান বলে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
জেলা সদর সিউড়িতেও প্রায় ২০টি লজ এবং হোটেল রয়েছে। সেগুলির অবস্থাও তথৈবচ। সিউড়ির লজ এবং হোটেল মালিকদের দাবি, লকডাউনের কারণে হোটেল লজ বন্ধ তো ছিলই। এখন খুললেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে মানুষ আসছেন না। তার উপরে সপ্তাহে দু’দিন লকডাউন ঘোষণা করায় পরে আরও সমস্যা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, লকডাউনের আগের রাতে কেউ থাকতে চাইছেন না। ফলে দুদিন লকডাউন হলেও চার দিন ব্যবসার উপর প্রভাব পড়ছে। আর শনি, রবিবার অফিস কাছারি বন্ধ থাকে তাই এমনিতেই ওই দিনগুলিতে সেই অর্থে কেউ আসেন না।
সিউড়ির একটি লজের মালিক কিসান পাল বলেন, ‘‘লজ ব্যবসায়ীরা অনেকেই টেলিফোন লাইন কেটে দিয়েছেন।’’ শহরের একটি বড় হোটেল এবং রেস্তোরাঁর মালিক সঞ্জয় অধিকারীও বলছেন, ‘‘কোনও আয় নেই। পকেট থেকে ভর্তুকি দিয়ে ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।