হাসিমুখে। ছবি: রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।
জন্ম থেকেই নেই দু’টি পা। কখনও হামাগুড়ি দিয়ে, কখনও বা হাতে ভর দিয়ে হাঁটতে হত বছর দশেকের দীপালি মাহাতোকে। স্কুলে যেতে হত মায়ের কোলে চেপে। একটি সংগঠনের তরফে বুধবার পুরুলিয়ার বোরোর নলকুড়ি গ্রামের ওই কিশোরীকে কৃত্রিম পা দেওয়া হয়েছে। তাতে ভর দিয়ে হাঁটতে পেরে খুশি দীপালি। সে হেসে বলে, ‘‘উঠে দাঁড়াতে পারছি। আর আমাকে হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হবে না। স্কুল খুললে এ বার এই পায়ে ভর দিয়েই স্কুলে যাব। আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে মাকে অনেক কষ্ট করতে হয়।’’
বান্দোয়ানের ধর্মশালায় ওই শিবিরে ৩২ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষকে কৃত্রিম হাত ও পা দেওয়া হয়। ওই সংগঠনের বান্দোয়ান শাখার সভাপতি সরিতা আগরওয়াল বলেন, “প্রতিবন্ধীদের দেখে খুব খারাপ লাগত। তাই আমরা আলোচনা করে এই কর্মসূচি নিয়েছিলাম।’’ এই উদ্যোগে তাঁদের পাশে ছিল কলকাতার একটি কুষ্ঠ হাসপাতাল। তিন জন প্রতিবন্ধীকে এ দিন ট্রাই-সাইকেলও দেওয়া হয়।
দীপালির বাবার মৃত্যু হয়েছে কয়েক বছর আগে। এ দিন দীপালিকে শিবিরে এনেছিলেন তাঁর জেঠতুতো দাদা স্বপন মাহাতো। তিনি জানান, পড়াশোনায় খুবই ভালো দীপালি। পঞ্চম শ্রেণিতে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে তাকে। বাঁ হাত দিয়ে লেখে। বেশ কয়েক বছর ধরে মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে থাকছে দীপালি। তার মা কাজলা মাহাতো বলেন, ‘‘জন্ম থেকেই মেয়ের দু’টো পা নেই। ডান হাতের কয়েকটি আঙ্গুলও নেই। দাঁড়াতে পারে না। কোলে নিয়ে যেতে হয় সর্বত্র। স্কুলেও পৌঁছে দিতে হয় কোলে করে। এ বার ও নিজেই স্কুলে যেতে পারবে।’’
শিবিরে উপস্থিত চিকিৎসক সুহৃদ বাঁশ্রীয়ার বলেন, ‘‘এই প্রথম কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করল দীপালি। প্রথম কিছু দিন অভ্যাস করতে হবে। তার পরে, কৃত্রিম পা ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।’’
শিবিরে কৃত্রিম হাত পেয়েছেন বোরোর জরগেড়িয়ার বাসিন্দা বছর পঁচাশির খগেশ্বর মাহাতো। তিনি জানান, বছর ২০ আগে একটি দুর্ঘটনার পরে, তাঁর হাতের অর্ধেক কেটে বাদ দিতে হয়। কৃত্রিম হাত পেয়ে খুশি খগেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘এই হাত দিয়ে ভারী জিনিসও তুলতে পারছি।’’