হাতেগোনা যাত্রী। মঙ্গলবার পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়া জেলায় বেসরকারি বাস নামল না মঙ্গলবারেও। ফলে, হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাসই ভরসা যাত্রীদের। অন্য দিকে, পুরুলিয়া জেলায় প্রশাসনের কথামতো বাস নামিয়েও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছে ‘বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালিয়ে লোকসানের বহর বাড়ছে বলে এ দিন পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে বাস মালিকদের ওই সংগঠন।
বাস ভাড়া বাড়াতে রাজ্য সরকার সম্মত না হলেও যত আসন, তত সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দিন আগে জানিয়েছেন। সোমবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি বাস চালু হয়েছে। কিন্তু বাঁকুড়া জেলায় বেসরকারি বাস না নামায় সমস্যার কথা তুলেছেন যাত্রীরা।
বেসরকারি সংস্থার বহু কর্মীই নিয়মিত বাসে যাতায়াত করেন। অফিস খুলতেই তাই বাস ধরতে জেলার নানা বাসস্টপে ভিড় বাড়ছে। চাহিদার তুলনায় বাস কম বলে ভিড় হওয়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। এতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকেই।
প্রতিদিন দুর্গাপুরে যান বড়জোড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমণ এড়াতে বাসে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী থাকা আবশ্যক। বাস কম থাকলে তা হবে কী করে? সে জন্য যত দ্রুত বাসের সংখ্যা বাড়ে, ততই মঙ্গল।” যদিও বাঁকুড়া বাস মালিক কল্যাণ সমিতির তরফে দাবি করা হচ্ছে, পথে বাস নামানোর জন্য লিখিত ভাবে সরকারি নির্দেশিকা এখনও তাদের দেওয়া হয়নি। বাস মালিকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে থাকায় বাসের যন্ত্রাংশেও নানা সমস্যা হয়েছে। মেরামত করতে সময় লাগবে। ফলে কবে বেসরকারি বাস পরিষেবা সচল হবে, তার সদুত্তর মেলেনি।
যদিও বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অসীমকুমার বিশ্বাস বলেন, “দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বাস অনেক বেড়েছে। বেসরকারি বাস মালিকদের সঙ্গেও আমরা বাস চালানোর ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।” এসবিএসটিসি-র জ়োন ইনস্পেক্টর দেবাশিস চৌধুরী জানান, তাঁরা বাঁকুড়া ডিপো থেকে এখন ১৪টি বাস চালাচ্ছেন। বাঁকুড়া থেকে কলকাতা, ঝাড়গ্রাম, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া ছাড়াও জেলার মধ্যে বাঁকুড়া থেকে খাতড়া, সোনামুখী ও বিষ্ণুপুর রুটেও বাস চালাচ্ছেন। বাইরের ডিপো থেকেও জেলায় বাস ঢুকছে।
সোমবারের তুলনায় এ দিন পুরুলিয়ায় বেসরকারি বাসে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও, সব আসন ভরেনি। ‘পুরুলিয়া জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সোমবারের আগে পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু রুটে হাত গোনা কয়েকটি বাস চালিয়েছিলাম। একেবারেই যাত্রী হয়নি। সোমবার থেকে জেলার মধ্যে বেশির ভাগ রুটেই আমরা বাস চালাচ্ছি। কিন্তু দু’দিনে তেমন যাত্রী বাড়েনি। এ ভাবে কত দিন বাস চালাতে পারব জানি না। এ দিন আমরা জেলা পরিবহণ আধিকারিককে সমস্ত অবস্থা জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।’’
পুরুলিয়া জেলা পরিবহণ আধিকারিক দীনেশ দে বলেন, ‘‘বাস মালিক সংগঠনের চিঠি পেয়েছি। তবে ধীরে ধীরে সমস্ত রুটেই যাত্রী বাড়বে। বাস চালু হওয়ার খবর এখনও অনেকের কাছে পৌঁছয়নি।’’
তবে এ দিন বাসে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন আড়শার কৌরাং গ্রামের বৃন্দাবন মাহাতো, বাঘমুণ্ডির রামজীবন কুমারের মতো অনেকেই। আবার এখনই বাসে ওঠা নিয়ে দ্বিধাও রয়েছে কারও কারও। বান্দোয়ানের বাসিন্দা দীপককুমার মাহাতো বলেন, ‘‘পুরুলিয়া শহরে কাজ রয়েছে। কিন্তু এখনই বাসে উঠতে ভরসা পাচ্ছি না।’’
ঝালদার তুলিনের বাসিন্দা মলয় সাও বলেন, ‘‘বাসে উঠতে ভয় রয়েছে। আবার কলকাতা যাওয়াও জরুরি।’’ তবে সংশয় নিয়েও এ দিন তিনি বাসে কলকাতা রওনা দেন।’’