লক্ষ্মী এবং সরস্বতী এক বেদীতে। নিজস্ব চিত্র।
লক্ষীর সঙ্গে একই বেদীতে পূজিত হন সরস্বতী। এমনই বিরল পুজো হয়েছে আসছে বীরভূমের শান্তিনিকেতনের তালতোড় গ্রামে।
জমিদারি প্রথা লোপ পেলেও তাদের লোকাচার এবং ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে এখনও। শান্তিনিকেতনের তালতোড় জমিদার বাড়ির লক্ষ্মীপুজো তার অন্যতম উদাহরণ। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন লক্ষ্মী এবং সরস্বতী— দুই দেবীকে একই সঙ্গে বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছে তালতোড় গ্রামের ঘোষ পরিবার। ঘোষ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে জমিদার লোটন ঘোষের স্ত্রী স্বর্ণময়ী দেবী মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান। তার পর শুরু হওয়া দুর্গাপুজো এখনও চলছে। সেই দুর্গা মণ্ডপেই সাড়ম্বরে লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর পুজো অর্চনা করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এই পুজো দেখতে বোলপুর শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি ভিড় করেন আশেপাশে গ্রামের বাসিন্দারাও।
লক্ষ্মী-সরস্বতীর এক সঙ্গে পুজো নিয়ে ঘোষ পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুকুমার ঘোষ বলেছেন, ‘‘দেবী লক্ষ্মী ও সরস্বতী দুই বোন। একে অপরের পরিপূরক। তাই তাঁদের পুজো এক সঙ্গে করা হয়। আলাদা করে দু’টি ঘট আনা হয়। জমিদারি আমলে জাঁকজমক করে ঝাড়বাতি জ্বালানো হতো। আরতির সময় বড় বড় পাখা ব্যবহার করা হতো। আশেপাশের কুটিপাড়া, মহিষঢাল, বনডাঙা, জলজলিয়া, শেহালাই প্রভৃতি গ্রামের সাধারণ এবং আদিবাসী মানুষ সমবেত হতেন এবং ভোগ খেতেন।’’
লক্ষ্মী পুজোর দিন দুই দেবীকে সোনা এবং রুপো দিয়ে সাজানো হয়। পুজোর দিন বাড়ির কেউ অন্নভোগ খান না। পরিবর্তে লুচি ভোগ খান। জমিদারি আমলে যে প্রথা শুরু হয়েছিল, তা এখনও অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন সুকুমার। তবে আর্থিক সঙ্গতির কারণে গ্রামবাসীদের ভোগ খাওয়ানোর আয়োজন কিছুটা হলেও কমেছে। পুজোর পরের দিন পরিবারের প্রতিষ্ঠিত পুকুরেই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।