বর্ণালি সরকার। নিজস্ব চিত্র।
কখনও ‘ইভটিজ়ার’ ধরতে সাদা পোশাকে ঘুরেছেন শহরের রাস্তায়। আবার কখনও ভিন্-জেলায় গিয়ে বাড়ির মেঝে ভাঙিয়ে উদ্ধার করেছেন দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ থাকা বধূর দেহাবশেষ। নাবালিকা ধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে পারদর্শিতার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তবে এ সব কিছুকে ছাপিয়ে বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ থানার ওসি বর্ণালি সরকারকে শবর গ্রাম বাঁকাকদম, চেলেপাথরের মহিলারা বেশি চেনেন ‘বই পাঠানো দিদি’ হিসাবেই।
উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার বাসিন্দা, বছর উনত্রিশের বর্ণালি পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন ২০১৪-এ। ২০১৭-য় বাঁকুড়া মহিলা থানার ওসির দায়িত্ব পান। তার পরে, বদলি হন হিড়বাঁধ থানায়। এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি, যে কোনও সমস্যায় ‘পুলিশ দিদি’-কে পাশে পান বলে জানান এলাকার অনেকে।
বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল জানান, হিড়বাঁধের বাঁকাকদম গ্রামের বছর তিনেকের শবর পরিবারের এক শিশুকন্যার পায়ে মাংসপিণ্ড জমে সংক্রমণ হয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসে বর্ণালির। বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের সহায়তায় ওই শিশুকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।
শিশুকন্যাটির বাবা স্বপন শবরের কথায়, “মেয়ের পায়ে বছরখানেক ধরে সংক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না। ‘পুলিশ দিদি’ই সব ব্যবস্থা করেছেন।”
সজল আরও জানান, কেবল বাঁকাকদম গ্রামের ওই ঘটনাই নয়, আশপাশের গ্রামের শিশুদের নানা সমস্যায় আগেও বর্ণালি সহযোগিতা করেছেন। শিশুদের অধিকার রক্ষায় সচেতনতা প্রচারেও সব সময়েই ওঁর সাহায্য মেলে।
তবে ‘বই পাঠানো দিদি’ নাম কেন? বর্ণালি বলেন, “পুলিশ সুপারের উদ্যোগে ‘উত্তরণ’ কর্মসূচিতে জেলা পুলিশের তরফে জেলার ছেলেমেয়েদের সরকারি চাকরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হিড়বাঁধের শবরপাড়ার শিশুদের শিক্ষামুখী করতে বই-খাতা কিনে দেওয়া ও রুটিনমাফিক গ্রামের আটচালায় পাঠশালায় তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছি। হিড়বাঁধ থানার পুলিশকর্মীরা সময় করে গিয়ে ওই শিশুদের হাতে ধরে পড়াচ্ছেন।”
তিলাকানালি গ্রামের এক পড়ুয়ার অভিভাবক সন্তু সর্দারের কথায়, “ওসি ম্যাডাম পড়ুয়াদের বই ছাড়াও, অন্য শিক্ষাসামগ্রী দেন। কিছু দিন আগে পোশাকও দিয়েছিলেন।”
শিশুদের জন্য এগিয়ে আসার জন্য রাজ্য শিশু অধিকার আয়োগের তরফে ২০২০-তে ‘শিশুবান্ধব’ পুরস্কারও পেয়েছেন বর্ণালি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পুলিশের কাজের পাশাপাশি, সামাজিক ক্ষেত্রেও ছাপ ফেলা কাজ করছেন বর্ণালি। আগামী দিনে ওঁর কাছ থেকে আরও ভাল কাজের আশা রাখি আমরা।”
মেয়ের কাজে খুশি মৃদুলকান্তি সরকারের কথায়, “বর্ণালির মধ্যে বরাবরই কিছু করে দেখানোর চেষ্টা ছিল। নিজের ইচ্ছেতেই পুলিশে যোগ দিয়েছে। আগামী দিনেও দেশের সেবায় কাজ করুক, এটাই চাই।”