সিভিক ভলান্টিয়ারের কোলে শিশুকন্যা। নিজস্ব চিত্র
মা এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মাত্র দু’মাসের মেয়ে খুঁজে পেল এক অন্য মা-কে। না তিনি গর্ভে ধারণ করেছেন, না লালন-পালন করেছেন। তবুও ওই শিশুর ‘কয়েক ঘণ্টার মা’ তিনি-ই।
ঘটনাটি নলহাটি থানার প্রসাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। দুই মাসের শিশু কন্যাকে পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে এক আত্মীয়ের কাছে রেখে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন এক পরীক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পরেই খিদেয় শিশুটি কাঁদতে শুরু করে। কিছুতেই ওই আত্মীয় তাকে সামলাতে পারছিলেন না। বেশ কয়েক বার তিনি স্কুলের কয়েক জন শিক্ষকের কাছে অনুরোধও করেন পরীক্ষাকেন্দ্রে মায়ের কাছে শিশুটিকে পাঠানো যায় যদি। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন অন্য পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা ভেবেই না করে দেন শিক্ষকেরা। স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি নিজেই এগিয়ে এসে শিশুটিকে কোলে নেন এবং স্তন্যপান করান। নতুন মা’কে পেয়ে পরম নিশ্চিন্তে তাঁর কোলে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েও পড়ে শিশুটি।
নলহাটির আটকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সাহিনা বেগম। সে প্রসাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। দুই মাসের শিশু কন্যাটি তার। সোমবার মেয়েকে নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়েছিল সে। সঙ্গে থাকা আত্মীয়ের কাছে মেয়েকে রেখে পরীক্ষা দিতে বসে। সেই সময় পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে ডিউটিতে ছিলেন, নলহাটি থানার সিভিক ভলান্টিয়ার রুকমনি খাতুন। তিনি শিশুটির কান্না দেখে এগিয়ে এসেছিলেন। মঙ্গলবারও রকমনিকে দেখা যায় শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরতে।
রুকমনি বলেন, ‘‘শিশুটি খিদেয় কাঁদছিল। তার আত্মীয় কোনও ভাবেই চুপ করাতে পারছিলেন না। আমি তো এক জন মা। কী ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকব! সাহিনাকে বলেছি, ও নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিক, এ’কদিন ওর মেয়ের মা আমিও।’’ রুকমনিকে পেয়ে খুশি সাহিনাও বলে, ‘‘পরীক্ষা দিতে দিতে মেয়ের কথা ভাবছিলাম। বেরিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনে খুব ভাল লেগেছে। রুকমনি দিদির কোলে মেয়েকে দিয়ে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিয়েছি।’’