বাদুড়ঝোলা: মিনি ট্রাকে যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়া থেকে গেল সাতশো বাস। আর পুরুলিয়া থেকে রওনা হল সাড়ে তিনশো বাস। একুশে জুলাইয়ের কলকাতায় যাওয়ার জন্য এত বাস জেলার রাস্তা থেকে উঠে যাওয়ায় আজ শনিবার পথে বের হলে দুর্ভোগ যে সঙ্গী হবে, তা দুই জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের বাস ভাড়া নেওয়ার ওই তথ্যেই স্পষ্ট। শুক্রবারই পথে নেমে তার আঁচও পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বাসিন্দারা। দুই জেলায় এ দিন অধিকাংশ রুটেই বাস চলেনি। সেই সুযোগে ছোট ভাড়া গাড়িও কিছু কিছু এলাকায় চড়া দর হাঁকিয়েছে অভিযোগ। তবে প্রশাসনের তরফে, একুশের জেলার পথে সরকারি বাস বেশি চালানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছর ধরেই একুশে জুলাই কলকাতায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ উপলক্ষে দলীয় কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলার প্রায় সব বেসরকারি বাসই ভাড়া করে নেওয়া হয় দলের তরফে। এ বারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বেশ কিছু দিন ধরেই বাঁকুড়া থেকে আরামবাগ এবং সোনামুখী হয়ে বর্ধমান যাওয়ার বাস চলছিল হাতে গোনা। শুক্রবার সকাল থেকেই জেলায় ওই সব রুটে বাস চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এ দিন বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রুটেও বেসরকারি বাস তেমন চলতে দেখা যায়নি। তবে এই রুটে বেশ কিছু এসবিএসটিসি (দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগম) বাস চলাচল করে বলে পরিবহণ ব্যবস্থা একেবারে অচল হয়ে যায়নি। ভিড়ে ঠাসা বাসে কার্যত বাদুড় ঝোলা হয়ে সরকারি বাসে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর রুটেও এ দিন হাতে গোনা কিছু বেসরকারি বাস চললেও মূল ভরসা ছিল এসবিএসটিসি-র বাসই। যদিও বিষ্ণুপুর- সোনামুখী রুটে এসবিএসটিসি বাস না থাকায় পরিবহণ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে বলে অভিযোগ। বাঁকুড়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক অঞ্জন মিত্র বলেন, “এদি ন পর্যন্ত বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া খতড়া রুটে আমরা বাস পরিষেবা দিতে পেরেছি। বাকি রুটগুলিতে বাস নামাতে পারিনি।”
পুরুলিয়া জেলার একটা বড় অংশে রেলপথ থাকলেও দক্ষিণ দিক রেল-বঞ্চিত। তার উপরে এই জেলায় সরকারি বাসও সব রুটে নেই। ফলে বেসরকারি বাস-নির্ভর এলাকাগুলিতে এ দিন থেকেই সমস্যা শুরু হয়ে যায়। পুরুলিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘জেলা থেকে রিজার্ভ বাস প্রায় ৬০টি এবং রুটের প্রায় শতিনেক বাস কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সমাবেশের বাস ছেড়েছে। তার আগে পর্যন্ত বাসগুলি যাত্রী পরিবহণ করেছে।’’ যদিও মানবাজার বাসস্ট্যান্ডের এক বাসকর্মী বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে বাস ছাড়ার কথা থাকলেও অতটা রাস্তা যেতে যাতে গাড়ির কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য ছোটখাট মেরামতির কাজ সেরে রাখা হচ্ছে।’’ ঘটনা হল, সকাল দিকে যদিও বা কিছু বাস মিলেছে, বেলা গড়াতেই দক্ষিণ পুরুলিয়ার বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে সে সব বাস উধাও হয়ে গিয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ছোট ভাড়া গাড়িও সুযোগ বুঝে চড়া ভাড়া নিয়েছে বলে অভিযোগ।
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘সাধারণ যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ না হয়, সে জন্য যে সব এলাকায় ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে, সেখানকার কর্মীদের ট্রেনেই যেতে বলা হয়েছে।’’ দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ভোর-রাত থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় চারশো ছোট গাড়ি সভায় যাওয়ার কথা। তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেলা থেকে এ বার সাতশোর বেশি বাসে কর্মীরা রওনা হয়েছেন। জেলায় অত বাস পাওয়া যায়নি বলে বাইরের জেলা থেকেও বাস নেওয়া হয়েছে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটিতে বেসরকারি বাস পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে গেলেও প্রশাসনকে আগাম পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এসের আশ্বাস, “যাত্রীদের সমস্যা যাতে না হয় সে জন্য শনিবার এসবিএসটিসি বাসগুলিকে সঠিক সময়ে চালানো হবে। কিছু রুটে ওই বাসগুলিকে বেশি সংখ্যায় চালানোরও ব্যবস্থা
করা হচ্ছে।’’
বিডিওদেরও এ ব্যাপারে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। যদিও অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বাসিন্দাদের একাংশ আশঙ্কা করছেন, এ বারও একুশের জেলা অলিখিত ‘বাস ধর্মঘটই’ দেখতে চলেছে।