দিল্লির যন্তরমন্তরে বাংলার আন্দোলনকারীরা। নিজস্ব চিত্র
একশো দিনের কাজের প্রকল্পের বকেয়া মজুরি মেটানোর দাবিতে এ বার দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসলেন শ্রমিকেরা।
একশো দিনের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কর্মরত সর্বভারতীয় সংগঠন, ‘নারেগা সংঘর্ষ মোর্চা’র নেতৃত্বে সম্প্রতি দিল্লিতে কর্মসূচিটি শুরু হয়েছে। মোর্চার তরফে প্রেমচাঁদ মাইতি জানান, গত সপ্তাহ থেকে দিল্লিতে ধর্না শুরু হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অধিকারের দাবিতে কাজ করা একাধিক সংগঠন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। ধর্না কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতিও।
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জেলার মোট বকেয়া রয়েছে ৮৭.৫৫ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মোট বকেয়া রয়েছে ৬৯.৫৯ কোটি টাকা। ওই অর্থবর্ষেই অন্য দফতরের মাধ্যমে ওই প্রকল্পে বকেয়া আরও ২.৪১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মোট বকেয়া ১৫.৩৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবর্ষে অন্য দফতরের মাধ্যমে ওই প্রকল্পে বকেয়া রয়েছে ০.২১ কোটি টাকা।
বকেয়া মজুরির দাবিতে যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছেন হুড়া ব্লকের লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েতের খৈরি-পিহিড়া গ্রামের দম্পতি চিত্ত টুডু ও সোনামণি টুডু। তাঁদের কথায়, “দিনমজুরি করেই সংসার চলে। পুকুর সংস্কারের কাজ করেছিলাম। তবে এখনও টাকা পাইনি।” ঝালদা ১ ব্লকের ইচাগ গ্রামের প্রতিমা মাহাতোও বলেন, “ছ’টি হাপা খননের কাজ করেছি। কিন্তু এক টাকাও মজুরি পাইনি। মজুরির দাবিতেই এখানে এসেছি।” ওই ব্লকের কুকি গ্রামের বাসিন্দা কবিতা মাহাতো, ঝালদা ২ ব্লকের জজলং গ্রামের অষ্টমী ওরাঁওয়েরা জানান, এক বছর অপেক্ষাতেও মজুরি পাননি। সেই দাবিতে ধর্নায় বসেছেন।
প্রেমচাঁদের কথায়, “পুরুলিয়া থেকে ৩০ জন শ্রমিক এসেছেন। শনিবার থেকে তাঁরা বকেয়া মজুরির দাবিতে ধর্না শুরু করেছেন। অন্য রাজ্যগুলি থেকেও শ্রমিকেরা পালা করে এখানে আসবেন। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাক। তবে দরিদ্র শ্রমিকদের প্রাপ্য টাকা কেন আটকে রাখা হবে, এটাই আমাদের প্রশ্ন।”
বকেয়া মজুরির দাবির পাশাপাশি ‘নারেগা বাঁচাও’ স্লোগানও তুলছে সংগঠনটি। প্রেমচাঁদের দাবি, যে প্রকল্পে কাজ করে একেবারে নিচুতলার মানুষজন, দরিদ্র শ্রমিকেরা হাতে নগদ পান, একশো দিনের কাজের সেই প্রকল্পে গত বাজেটে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, “আমাদের স্লোগান, ‘নারেগা বাঁচাও’। সরকার তুমি আইন মানো। মনে রাখতে হবে, নারেগা কিন্তু আইন।” এর পাশাপাশি, ওই প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো, একশো দিনের বদলে দু’শো দিনের কাজ দেওয়া, পরিবারের বদলে ব্যক্তিপিছু জবকার্ড দেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে সংগঠনের তরফে।