প্রধান গঠনের পর জোট প্রার্থীদের নিয়ে মিছিল। বান্দোয়ানের কুমড়াতে। ছবি- রথীন্দ্রনাথ মাহাতো।
বান্দোয়ানের কুমড়া পঞ্চায়েত এ বারও রইল জোটের দখলে। এই নিয়ে প্রায় ২৫ বছর একটানা জোট গড়েই বোর্ড দখল করে প্রধান নির্বাচনের ধারা চলে আসছে এখানে। সে বাম আমলে হোক বা তৃণমূলের জমানায়। এই পঞ্চায়েত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা দখল করতে পারেনি কোনও শাসকদলই।
এ বারও পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট করে সিপিএম, কংগ্রেস, জেএমএম ও ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি। এ বার পঞ্চায়েতে আসন সংখ্যা ৭ থেকে বেড়ে ৯ হয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই চারটি দলের নেতৃত্ব আসন সমঝোতা করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে। নির্বাচনে সিপিএম ২টি, জেএমএম ২টি, কংগ্রেস ১টি আসন পায়। তৃণমূল জেতে চারটি আসনে।
শুক্রবার পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় জোট ও তৃণমূল দু’পক্ষই নিজেদের তরফে প্রধানের নাম প্রস্তাব করে। ভোটাভুটিতে জোটের এক জনের ভোট ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় বাতিল হয়। ফলাফল ৪-৪ হলে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষে লটারির মাধ্যমে বিরোধী জোটের সদস্যই প্রধান নির্বাচিত হন।
প্রধান হয়েছেন জোটের জেএমএম সদস্য মৌসুমী মুর্মু, উপপ্রধান হন কংগ্রেসের অনিলবরণ মানকি। প্রধান নির্বাচনের পরেই তাঁরা এলাকায় মিছিল করেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা জানাচ্ছেন, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন শাসকদল সিপিএমের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম গণতান্ত্রিক মহাজোট তৈরি হয়। সেই সময় এই মহাজোটে যোগ দেয় কংগ্রেস, জেএমএন, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি ও তৃণমূল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত চার বার কুমড়া পঞ্চায়েত দখল করে ওই মহাজোট। কিন্তু ২০১৮ সালে তৃণমূলকে বাদ দিয়ে সিপিএমকে নিয়ে নতুন জোট তৈরি হয়। সেই ধারা এখনও চলছে।
কংগ্রেসের জেলা কমিটির সদস্য জগবন্ধু সিং মানকি ও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য রথু সিং বলেন, ‘‘১৯৯৮ সাল থেকে জোটের ক্ষমতায় রয়েছে কুমড়া পঞ্চায়েত। একক ভাবে কোনও রাজনৈতিক দল এখানে প্রধান গঠন করতে পারেনি। সিপিএমের সরকারের সময় তৃণমূল জোটে সামিল ছিল। এখন তৃণমূলকে হাটাতে সিপিএম, কংগ্রেস, জেএমএম মিলে জোট করে নির্বাচনে লড়াই করেছিলাম। তৃণমূল অনেক চেষ্টা করেছিল বোর্ড গঠন করতে। কিন্তু জোটের ঐক্যে তারা ফাটল ধরাতে পারেনি।’’
বিরোধী-জোটই কেন বারবার জেতে? জেএমএম-এর অঞ্চল কমিটির উপদেষ্টা অনিল হাঁসদা বলেন, ‘‘এখানে সব দলই সাংগঠনিক শক্তিতে প্রায় সমান। কিন্তু শাসকদলের সঙ্গে পেড়ে ওঠা সহজ নয়। তাই বিরোধীরা বরাবর এখানে জোটবদ্ধ হয়েই লড়াই করছেন। এখানকার মানুষও বরাবর বিরোধী জোটের উপরেই ভরসা করেন।’’ তিনি জানান, পঞ্চায়েতের সদস্যেরা উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করলেও অনেক সময় সহায়তা ঠিক মতো মেলে না।
এলাকায় তৃণমূলের সদ্য জয়ী জেলা পরিষদের সদস্য কলেন্দ্রনাথ মান্ডি বলেন, “কুমড়ায় সব ক’টি আসনেই আমরা প্রার্থী দিয়েছিলাম। আমরা চারটি আসন দখলও করেছি। তবে লটারিতে আমরা হেরে গিয়েছি। না হলে অতীতের রেকর্ড ভেঙে আমাদেরইবোর্ড গঠন হত।’’