বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে পুকুর
কোথাও ভরাট হয়ে যাচ্ছে, কোথাও আবার সংস্কারের অভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে জল। বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বহু পুকুরের এমন হাল নিয়ে প্রায়ই সরব হন পরিবেশপ্রেমী মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দারাও এলাকার দীর্ঘদিনের পুকুরগুলির অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবুও সমস্যা মেটে না।
পুরভোট আসন্ন বুঝে ফের সেই ক্ষোভের কথা শোনা যাচ্ছে মানুষজনের মুখে। বাঁকুড়া শহরের পুকুরগুলির ‘করুণ দশা’ নিয়ে শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, তাদের ইস্তাহারেও বাঁকুড়া পুরসভার পুকুর সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সিপিএমও মানুষের কাছে এলাকার পুকুরগুলির অবস্থার কথা তুলবে বলে দাবি করেছে।
পানীয় জলের সমস্যা অনেকখানি মিটলেও এখনও বাঁকুড়ার বহু বাসিন্দা পুকুরে স্নান সারেন। দৈনিক নানা কাজে পুকুরের জল ব্যবহার করেন। কিন্তু সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ পুকুরের অবস্থাই শোচনীয় বলে অভিযোগ। বাঁকুড়ার ১২ নম্বর ওয়ার্ডেও বেশ কয়েকটি পুকুরের অবস্থা খারাপ। ওই ওয়ার্ডের পুরাতন রথতলায় পুরসভার নজরুল পার্ক লাগোয়া এলাকায় রয়েছে কুলুপুকুর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্য এনে ওই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এ ভাবেই পুকুরটির অনেকখানি ভরাট হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি ভাঙার আবর্জনা স্তূপ আকারে জমা হয়েছে পুকুরের অনেকটা জুড়ে। জলও নোংরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোথাও ঘরবাড়ি ভাঙা হলেই আবর্জনা পুকুরে এনে ফেলা হয়।
কাছেই শিখরিয়াপাড়া। সেখানে বাবুপুকুরে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেল। আগাছায় ভর্তি পুকুর। তারই ফাঁকে পড়ে থার্মোকলের থালা, প্লাস্টিকের প্যাকেট ইত্যাদি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পুকুরের জল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাবুপুকুরের উল্টো দিকেই সাঁওতালপুকুর। তার অনেকখানি অংশ মজে গিয়েছে। প্রবীণ বাসিন্দা চিন্তাহরণ দাস বলেন, “এই পুকুরগুলি আগে বেশ বড় ছিল। দিন-দিন আবর্জনা ফেলায় এখন বেশির ভাগই মজে গিয়েছে। কোনও দিন সংস্কার করা হয়নি। আমরা চাই, পুকুরগুলির সংস্কার করা হোক।”
৫ নম্বর ওয়ার্ডের দত্তপুকুরও ক্রমেই মজে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, সংস্কারের অভাবে ওই পুকুরের জল এমনই নোংরা হয়ে পড়েছে যে বর্তমানে আর ব্যবহার করা যায় না। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা দীনবন্ধু দত্ত বলেন, “যখন ছোট ছিলাম, তখন পুকুরে টলটল করত জল। আজকের দিনের সঙ্গে মেলানোই যায় না।” আরও বহু ওয়ার্ডের পুকুর একই দশায় পড়ে রয়েছে। পুরবাসীর অভিযোগ, পুকুরগুলির জলধারণ ক্ষমতা কমে গিয়েছে বলে অল্প বৃষ্টিতেই বহু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পুকুরগুলির এই বেহাল পরিস্থিতির প্রভাব পরিবেশের উপর পড়ছে বলে অভিযোগ তুলছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, টানা ১০ বছর ধরে বাঁকুড়া পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। অথচ, ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয় এমন হাতে গোনা কয়েকটি জলাশয় ছাড়া আর কোনও পুকুরই সংস্কার করা হয়নি। অজিতবাবুর দাবি, ‘‘তৃণমূলের আমলে গোটা রাজ্য জুড়ে প্রোমোটারি-রাজ কায়েম হয়েছে। এখানেও মানুষ তা দেখছেন। পুরভোটে ওরা জবাব পাবে।’’ বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, “সিপিএমের আমলেই পুকুর ভরাট করে প্লট বানিয়ে জমি বিক্রি করে দেওয়া হত। আমরা তা আটকে দিয়েছি। তাই ওদের মুখে পুকুর-বাঁচানো নিয়ে কথা মানায় না।”
তৃণমূলকে আক্রমণের চেষ্টা করছে বিজেপিও। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “তৃণমূলের অপদার্থতার জন্যই শহরের পুকুরগুলির হাল আজ বেহাল। আমরা দলীয় ইস্তাহারেই শহরের পুকুর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেব। ক্ষমতায় এসে শহরের প্রতিটি পুকুরকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হবে।” মহাপ্রসাদবাবুর কটাক্ষ, “কেন্দ্র থেকে পুরসভাকে দৈনিক কাজের জন্য দেওয়া প্রকল্পই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই টাকাতেই পুকুর সংস্কারের কাজ করানো হত। সদিচ্ছা থাকলে বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা আগে কেন্দ্রকে প্রকল্পগুলি চালু করতে বলুন।” তাঁর আশ্বাস, তৃণমূল ক্ষমতায় ফিরলে শহরের পুকুর সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।