বারিকুলের খেজুরখেন্নায় জন্তুর পায়ের ছাপ পরীক্ষা করছেন মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) রাজীব শর্মা ও অন্য আধিকারিকেরা। ছবি: সুশীল মাহালি
বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে যে পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে, তা বাঘের হতে পারে বলে মনে করছে বন দফতর। সোমবার পায়ের ছাপগুলি খতিয়ে দেখে রাজ্যের মুখ্য বনপাল (কেন্দ্রীয় চক্র) রাজীব শর্মা বলেন, “এই পায়ের ছাপ বাঘের বলেই মনে হচ্ছে। তবে পুরুষ না মহিলা বাঘ, তা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না।”
মুখ্য বনপালের বক্তব্য, এই এলাকায় যে হেতু বাঘের বসবাস নেই তাই পায়ের ছাপ ছাড়াও আরও কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের দরকার রয়েছে। এর জন্য সুন্দরবন থেকে বাঁকুড়ায় ‘ক্যামেরা ট্র্যাপ’ নিয়ে আসা হচ্ছে বলেও জানান রাজীববাবু।
এ দিকে বাঁকুড়া দক্ষিণ বন বিভাগের তরফে জেলার প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের রানিবাঁধ, ঝিলিমিলি, ফুলকুসমা ও মটগোদা রেঞ্জ এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ডিএফও (দক্ষিণ) দেবাশিসমহিমাপ্রসাদ প্রধান জানান, ওই রেঞ্জ এলাকার জঙ্গলগুলিতে চব্বিশ ঘণ্টা বনদফতরের টহলদারি গাড়ি মজুত থাকবে। বনকর্মীরা জঙ্গল এলাকায় কড়া নজরদারি চালাবেন।
শনিবার রানিবাঁধ রেঞ্জের পুনশ্যা বিট এলাকার খেজুরখেন্না গ্রামের চাষ জমিতে প্রথম সন্দেহজনক পশুর পায়ের ছাপ দেখা যায়। ওই গ্রামেই এক সময়ের মাওবাদী শীর্ষনেতা রঞ্জিত পালের বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রঞ্জিতের বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচশো মিটার দূরত্বে ওই পায়ের ছাপগুলি দেখা গিয়েছে।
পায়ের ছাপের বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় হইচই শুরু হয়। বন দফতর সংগ্রহ করে পশুর পায়ের ছাপের ছবি। ওই পায়ের ছাপ বাঘের কি না, বাঁকুড়ার দক্ষিণ বন বিভাগের তরফে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা হয়নি।
সোমবার মুখ্যবনপাল রাজীব শর্মা ও বন দফতরের আধিকারিকেরা খেজুরখেন্নায় যান। ওই পশুর পায়ের ছাপ মেপে দেখেন রাজীববাবু। ঘটনাচক্রে এ দিন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা দাবি করেন, রবিবার রাতে খেজুরখেন্না লাগোয়া বারিকুলে একটি বাঘ দেখা গিয়েছিল। সেই খবর পেয়ে বনকর্তারা বারিকুলেও যান। তবে সেখানে কোনও সন্দেহজনক পশুর পায়ের ছাপ দেখা যায়নি।
২০১৮ সালে লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের দেখা মেলার পরে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলেও বাঘের আতঙ্ক দেখা গিয়েছিল। খাতড়া মহকুমার একাধিক জায়গায় সন্দেহজনক পশুর পায়ের ছাপ দেখে বাঘ বলে গুঞ্জন ছড়ায়। তবে সে বার বন দফতরের তরফে কোনও ছাপকেই বাঘের বলে স্বীকার করা হয়নি।
এ বার বাসিন্দাদের দাবি, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে উদ্যোগী হোক বন দফতর। ডিএফও (দক্ষিণ) বলেন, “গ্রামবাসীর আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। বন দফতরের তরফে যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেই সবই নেওয়া হচ্ছে।”