কৌশিকী অমাবস্যায় প্রতিবার কয়েক লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় তারাপীঠে।
আজ, রবিবার কৌশিকী অমাবস্যা। রাত থেকেই মানুষের ঢল নামবে তারাপীঠে। প্রতিবার কয়েক লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় তারাপীঠে। গোটা পর্ব নির্বিঘ্নে মেটাতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। যানজট এড়াতে শনিবার গভীর রাত থেকে তারাপীঠের রাস্তায় ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর থেকে ছোট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়মও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, কী এই কৌশিকী অমাবস্যা? তার মাহাত্ম্যই বা কী? নজরদারি কেমন? এ বার নতুন কী— তারই ঝলক।
আকাশে ড্রোন
অন্য বছরের মতো এ বারও তিন দিনের প্যাকেজে লজ, হোটেল ভাড়া পাওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও তারাপীঠ যাওয়ার জন্য রামপুরহাট থানার মনসুবা মোড় থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত আলো, অস্থায়ী শৌচালয়, পুলিশ ক্যাম্প, মেডিক্যাল ক্যাম্প, প্যাকেটের জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রামপুরহাট স্টেশন থেকে অটো ও ট্রেকারে যাত্রীপিছু ভাড়া ৪০ টাকা। রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ধৃতিমান সরকার জানান, এ বার মাটি থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে উড়ছে বিশালাকার আলোকিত গ্যাস বেলুন। তার গায়ে লেখা পুলিশ হেল্পলাইন নম্বর ৮০০১৫৮৮৮৩১। বীরভূম জেলা পুলিশ ও তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে এই ব্যবস্থা। তারাপীঠ থানার সামনে এই সুউচ্চ গ্যাস বেলুনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দশ-বারো ফুট উচ্চতায় দুটি ড্রোন আকাশে ঘুরবে। আকাশে ভাসমান দুটি ক্যামেরায় ভেসে উঠছে এলাকার ছবি। মনিটারিং এবং সেই সঙ্গে দৃশ্যের রেকর্ডিং করার জন্য পাখির চোখের মতো ঘুরছে দুটি ক্যামেরা। এ বারের তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে দুটি ড্রোন রাখা হয়েছে। যার একটি বীরভূম জেলা পুলিশ থেকে প্রথম তারাপীঠ দিয়েই ব্যবহার শুরু করছে। অন্য একটি তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের।
জায়ান্ট স্ক্রিন
সাত জায়গায় ওয়াচ টাওয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মাধ্যমে ঠেকানো হবে গণ্ডগোল। যে কোনও রকমের অবাচ্ছিত ঘটনা। নজর রাখা হবে মদ্যপদের। ইভটিজিং রুখতেও সহায় হবে ওয়াচটাওয়ার। ওয়াচ টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে পুলিশ অ্যাসিস্টান্ট বুথে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা কাজ করবেন। কৌশিকী অমাবস্যার দিন ভিড়ে ঠাসা মন্দিরে মা তারার দর্শন অনেকেই পান না। দূর থেকে জোড় হাত কপালে ঠেকিয়ে অনেককে ফিরে যেতে হয়। এ বারে দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য মন্দিরের গর্ভগৃহের পূজার্চনা পনের মিনিট অন্তর ১২/৮ জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হবে। সেই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার সহ এলাকার ভিড়, শ্মশানের চিত্র, লোকসমাগম জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হবে।
লোক গুনবে যন্ত্র
শ’য়ে শ’য়ে লোক চলেছে মা তারার টানে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে অগণিত লোকের মাথা। এ বার কৌশিকী অমাবস্যায় প্রতি ঘণ্টায় কত লোক এলাকায় প্রবেশ করছেন, তার হিসেব রাখবে যন্ত্র। তারাপীঠ ঢোকার মুখে দ্বারকা সেতু এবং তারাপীঠ তিন মাথা মোড়ে সেই যন্ত্র বসানো হয়েছে। জায়েন্ট স্কিনের ক্যামেরায় ফুটে উঠবে প্রতি ঘণ্টার লোক সমাগমের গ্রাফিক্স চিত্র। এমনটা এ বারই প্রথম।
হারিয়ে গেলে
কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে অনেকেই পরিবার, আত্মীয়দের সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যান। কেউ খুঁজে পান। কেউবা হারিয়ে যান। সেই অভিজ্ঞাতা থেকে বীরভূম জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশের উদ্যোগে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের সহযোগিতায় তারাপীঠে কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে শিশু-কিশোর, কিশোরী এবং বয়ষ্ক মানুষদের হাতে বেঁধে দেওয়া হবে রিস্ট ব্যান্ড। সেই ব্যান্ডের কোনওটাতে লেখা থাকবে নির্মল বীরভূমের প্রচার, কোনওটাতে থাকবে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচার। এবং ব্যান্ডে থাকবে সঙ্গী, অভিভাবকের মোবাইল নম্বর। সেটা লিখে দেবেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী কিংবা স্বেচ্ছাসেবকরা। এই ধরনের ২০ হাজার রিস্ট ব্যান্ড তৈরি করা হয়েছে।
ওয়াই-ফাই
থাকছে ওয়াই-ফাইয়ের সুবিধেও। পুলিশ, প্রশাসনের অনুমান, এ বছর কৌশিকী অমাবস্যা উপলক্ষে তিন থেকে চার লক্ষ লোকের সমাগম ঘটবে। তবে, অসম, বিহার, উত্তরবঙ্গ-সহ দক্ষিণবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য এ বছরে লোক সমাগম কম হওয়ার আশঙ্কা আছে। অনেকেই লজ বুকিং বাতিল করেছেন বলে লজ মালিক সূত্রে জানা গিয়েছে।
তিথির মাহাত্ম্য
অনেকের মতে, বামাখ্যাপা এ দিন সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। এ বারের কৌশিকী অমাবস্যা তিথি রবিবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে শুরু হচ্ছে। সোমবার রাত ১২টা ১১ মিনিটে অমাবস্যা ছাড়ছে। অমাবস্যা তিথি ঘিরে মা তারার মন্দির দু’দিন সারা রাত খোলা থাকবে।