পুরভোটে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা

কাজল সমাজবিরোধী, দাবি অনুব্রতর

প্রচারের অঙ্ক যাই বলুক, বোলপুরে স্বস্তিতে নেই শাসক দল তৃণমূল। বিরোধীদের দাবি, দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে ভোটের শেষ মুহুর্তে ঘুম উড়ে গিয়েছে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাস তালুকের নেতা-কর্মীদের। বোলপুর ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে শহরে লোক ঢোকায়, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ ও মহেন্দ্র জেনা

নানুর ও বোলপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৭
Share:

প্রচারের অঙ্ক যাই বলুক, বোলপুরে স্বস্তিতে নেই শাসক দল তৃণমূল। বিরোধীদের দাবি, দলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে ভোটের শেষ মুহুর্তে ঘুম উড়ে গিয়েছে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাস তালুকের নেতা-কর্মীদের। বোলপুর ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত এলাকা থেকে শহরে লোক ঢোকায়, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ কেউ।

Advertisement

দলের জেলা সভাপতি অনুব্রতর সঙ্গে লাগোয়া নানুরের পাপুড়ি গ্রামের বাসিন্দা তথা কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজের ভাই কাজল শেখের বিরোধ সুবিদিত। নানুর তো বটেই, বোলপুর ব্লকের এক বিস্তীর্ণ এলাকায় কাজলের দাপট অনুব্রত মণ্ডলের চাইতে কোনও অংশে কম নেই বলে দলীয় কর্মীরাই স্বীকার করেছেন। কাজল শেখ অবশ্য গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘বোলপুর পুরসভায় জয় পাওয়া মানে কারও একক প্রতিষ্ঠা পাওয়ার বিষয় নয়। সামগ্রিক অর্থে দলের প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা। তাই অন্যান্য নির্বাচনে আমি বা আমার কর্মীরা যে ভূমিকা পালন করে থাকি, এবারও তার অন্যথা হবে না।’’ যদিও অনুব্রত এ দিন সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘কাজল শেখের কোনও প্রভাবই পুরভোটে পড়বে না। পুরভোট কেন, কোনও নির্বাচনেই পর্বে না। কারণ ও আসলে একটা সমাজবিরোধী। সমাজবিরোধীর উপর ভরসা করে আমরা ভোট করি না।’’

ঘটনা হল, শেষ মুহুর্তে রাজ্যের উন্নয়নের জুজুই কার্যত জেলা সভাপতির নিজের শহর বোলপুরে তৃণমূলের অন্যতম পুরভোটের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ বেলায় প্রচারে ভোটারদের দরজায় দরজায় গিয়ে তাই জাহির করতে হয়েছে, রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছেন তাঁরা। উন্নয়ন চাইলে, তাঁদের কেই জেতাতে হবে। নইলে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতে হবে ভোটারদের।

Advertisement

পরিস্থিতি এমনই, ভোট নিয়ে চাপা আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে পুরবাসীর মুখে। বিশেষত লোকসভার ভোটের নিরিখে বিজেপির এগিয়ে থাকা বেশ কিছু ওয়ার্ডে বেশ আতঙ্কের পরিবেশ। ওই সব ওয়ার্ডগুলি দখল করার জন্য শাসক দল মরিয়া চেষ্টা চালাবে বলে প্রশাসনেরই একটি সূত্র জানাচ্ছে। তাই ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে দোটানায় রয়েছেন ওই সব ওয়ার্ডের ভোটররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক স্কুল শিক্ষক এবং ২০ নম্বার ওয়ার্ডের গৃহবধূ জানান, কলকাতার ভোটে যা অবস্থা দেখলাম তার পর আর ভোট দিতে যাব কি না নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কলকাতায় ভোটেও লোক জড় করার অভিযোগ উঠেছিল।

বস্তুত, ২০১০ পুর নির্বাচনে বোলপুর পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা ছিল ১৯টি। তার মধ্যে তৃণমূল দখল করেছিল ৯ টি। কংগ্রেসের দখলে ছিল ৮টি। এবং বামেরা পেয়েছিল দুটি। পরে অবশ্য কংগ্রেস থেকে ৫ জন এবং বামফ্রন্ট থেকে এক জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পুরসভায় একছত্র আধিপত্য কায়েম হয় তাদের। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ওয়ার্ড ভিত্তিক ফলাফলের নিরিখে বেশ কিছুটা উত্থান ঘটে বিজেপির। ওই নির্বাচনী ফলাফল মতো ১১টি ওয়ার্ডে তৃণমূল আধিপত্য ধরে রাখতে পারলেও ৮টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি।

লোকসভা নির্বাচনের পর খোদ বোলপুরে বিজেপি সভা করে কার্যত শাসক দলের জেলা সভাপতি অনুব্রতকে বেশ চাপের মুখের ফেলে দেয় বলে রাজনৈতিক দলের অভিমত। কসবা, ইলামবাজার এলাকার ওই সভাগুলিতে বেশ কিছু তৃণমূলের নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। অনুব্রতর খাস তালুকে দাঁড়িয়ে সেই সব সভায় শাসক দলের জেলা সভাপতিকে উৎখাত করার ডাক দেন বিজেপির তদানীন্তন জেলা সভাপতি দুধ কুমার মণ্ডল।

ওই সব জনসভায় ভিড় দেখে তার অন্যরকম ব্যাখ্যা শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের নেতা কর্মীদের একাংশের মুখে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বলাবলি করেন, জেলা সভাপতিকে সবক শেখাতেই বিজেপির ওই সভায় লোক পাঠিয়েছিল দলেরই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতারা। এবারে পুরভোটে বোলপুরে যে তেমনটা হবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ!

কোনও কোনও এলাকায় প্রকাশ্যেই অনুব্রত ও কাজল অনুগামীদের শিবিরের কোন্দল রয়েছে। জেলায় ভোটের জন্য কাজলের নিজস্ব এক বাহিনীও রয়েছে। কাজলের এক অনুগামীর দাবি, গত বিধান সভা, লোকসভা এমনকী পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই বাহিনীই তৃণমূলকে উতরে দিয়েছে।

ঘটনা হল, এবারে ওই বাহিনী কতটা সক্রিয় হয়, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে দলের একাংশেই। কারণ বোলপুরে তৃণমূল একছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পারলে রাজ্য নেতৃত্ব তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যাবে। যেটা দলে অনুব্রত বিরোধী শিবিরের কাছে কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওরা যেভাবে উন্নয়নের কথা বলে প্রচার করছে, তাকে ব্ল্যাক মেলিং ছাড়া আর কি বা বলা যেতে পারে। বলছে, ভোট না দিলে দেখে নেওয়া হবে।’’ বিজেপির জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বলেন, ‘‘ভোট না দিলে রাজ্যের সাহায্য মিলবে না। এমন কথা বলা মানেই হুমকি দেওয়া। আমরা সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করি না। তাই ভোট না পেলেও, আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নে পক্ষপাতী।’’

তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘সন্ত্রাস বা উন্নয়নের জুজু দেখিয়ে আমাদের ভোট করতে হবে না। উন্নয়ন দেখেই মানুষ আমাদের স্বেচ্ছায় ভোট দেবেন। তাই বাইরে থেকে লোক জড় করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোন ভোটার যদি আমাকে বলেন, তিনি নিরাপত্তার অভাবে ভোট দিতে পারছেন না, তাহলে তাঁর নিরাপদে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement