বাজেটে চোখ।—ছবি অভিজিৎ সিংহ।
রেলপথের প্রত্যাশা নিয়ে আরও একটি হতাশার বাজেট দেখল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল। শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট ঘোষণা টেলিভিশনে দেখার পরে বিভিন্ন মহলে এমনই প্রতিক্রিয়া মিলেছে।
আদ্রা-ঝাড়গ্রাম রেলপথের দাবি কম দিনের নয়। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। প্রতিবারের মতো এ বারও বাজেটের আগে ওই রেলপথ নির্মাণ নিয়ে হয়তো ঘোষণা হতে পারে বলে আশায় বুক বেঁধেছিলেন জঙ্গলমহলের অনেকেই। কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি। আদ্রা-ঝাড়গ্রাম রেলপথ সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দময় সেন বলেন, ‘‘দীর্ঘ আন্দোলনের পরে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এ বার হয়তো এই রেলপথের ঘোষণা করা হবে। ঝাড়গ্রামের সাংসদের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও হয়েছিল। ভোটের আগেও কথা হয়েছিল। তার আগে এই রেলপথ গড়ার বিষয়ে তৎকালীন রেলমন্ত্রী রামবিলাস পাশোয়ান, লালুপ্রসাদ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুকুল রায়, অধীর চৌধুরী থেকে বর্তমান রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কাছে বারবার দাবি জানানো হয়েছে। প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। কিন্তু রেলপথ পেলাম না।’’
ঘটনাচক্রে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ উপলক্ষে বান্দোয়ান থেকে শুক্রবার শুরু হওয়া পদযাত্রায় দাবিদাওয়ার মধ্যে রয়েছে ওই রেলপথের কথাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘আদ্রা ও ঝাড়গ্রামের মধ্যে রেলপথ চালু হলে জঙ্গলমহলের অর্থনৈতিক ছবিটাই বদলে যাবে। অথচ সেই দাবি উপেক্ষিতই রইল।’’
আগে ওই রেলপথের দাবিতে বান্দোয়ান থেকে আদ্রা পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিল কংগ্রেস। সেই কথা মনে করিয়ে বাঘমুণ্ডির বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোর বলেন, ‘‘বহু মানুষ এই রেলপথ চেয়ে পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু সেই রেলপথ আর হল কই?’’ আনন্দময়বাবু জানাচ্ছেন, ওই রেলপথ অনেক ব্লককে জুড়বে। মানবাজার থেকে আলাদা একটি লাইন পুরুলিয়া পর্যন্ত যেতে পারে। তাতে জেলার জীবনযাত্রা অনেকখানি বদলে যাবে।
প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া বলেন, ‘‘জঙ্গলমহল-সহ বাংলার যে গুরুত্বপূর্ণ রেল প্রকল্পগুলি ছিল তার এক ইঞ্চিও অগ্রগতি হয়নি। বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর লাইন যতদূর কাজ হয়েছিল, তারপরে আর এগোয়নি। ছাতনা-মুকুটমণিপুর লাইন বা বাঁকুড়া-পুরুলিয়া (ভায়া হুড়া) যে লাইনগুলি বাজেটে অনুমোদন পেয়েছিল, তা নিয়েও কোনও বড় ঘোষণা নেই। আদ্রা-ঝাড়গ্রাম লাইনটির সমীক্ষা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রেলপথের ঘোষণা হল না। রেল পরিষেবার দিক দিয়ে অত্যন্ত হতাশার বাজেট। বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘রেলপথের দাবির বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে রয়েছে। বাজেটে হয়তো ঘোষণা হয়নি। পরর্তীকালে আমরা এই বিষয়টি নজরে আনব।’’