রায়বাঁধ জল প্রকল্পে পাঞ্চেত বাঁধে ইনটেক ব্রিজ। নিজস্ব চিত্র।
‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প রূপায়ণে বড় ভূমিকা রয়েছে জেলার জলাধারগুলির। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের তৃতীয় পর্বে জলাধারগুলি ঘিরে নতুন পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। ওই পর্বে জেলার ৫৪৫টি মৌজার ১,০১,০৮৪টি পরিবার নলবাহিত পানীয় জলের পরিকাঠামোয় জুড়বে।
দফতর সূত্রে জানা যায়, জলাধারভিত্তিক চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে— (১) বলরামপুরের পাঁড়দ্দা-হনুমাতা জলাধার প্রকল্প, যা থেকে জল পাবেন ৩৭টি মৌজার ১০,৮৯৯টি পরিবার। (২) নিতুড়িয়ার রায়বাঁধ-পাঞ্চেত জলাধার প্রকল্প, যাতে ৩৬টি মৌজার ৬,৪০৬টি পরিবার যুক্ত হবে। (৩) কংসাবতী নদীকে ঘিরে তৈরি আড়শা প্রকল্প, যাতে ছ’টি মৌজার ৩,১৯৫টি পরিবার যুক্ত হবে। (৪) অযোধ্যা পাহাড়ের ‘মার্বেল লেক’ প্রকল্প। ওই প্রকল্পে পাহাড়ের ছ’টি মৌজার দশটি জনপদের ৫৯৯টি পরিবারে জল পৌঁছবে। গত বছরের জানুয়ারিতে মার্বেল লেক প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পরে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘ট্রায়াল রান’-ও শুরু হয়েছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “জলের গুণগত মান পরীক্ষার পরে, প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হবে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের পরিকল্পনা, অগ্রগতি সম্প্রতি দেখে গিয়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের রাজ্যের চিফ ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু চৌধুরী। ২০২৪-এ কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে জানিয়ে জেলাশাসক বলেন, “বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া শুরু হয়েছে। সঙ্গে, জলের নতুন উৎস খুঁজে সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্পের কাজও চলছে।”
তৃতীয় পর্বের পরেও, বাকি থাকবে ২,৬৩,৫০৩টি পরিবারে জল-সংযোগ দেওয়া। তার জন্য নতুন উৎস ধরে পরিকল্পনা-রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে। দফতরের এগ্জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুদীপ ঘোষ জানান, অবশিষ্ট ১,৬২২ মৌজায় জল-সংযোগ দেওয়ার পরিকাঠামো গড়তে ‘নাবার্ড’-এর অধীন সংস্থা সমীক্ষা করছে। জেলার উত্তর-পূর্বাংশের জন্য পাঞ্চেত ও দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের জন্য মুকুটমণিপুর জলাধারকে উৎস ভাবা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পাঞ্চেত থেকে ১,০৯৫টি ও মুকুটমণিপুর থেকে ৫২৭টি মৌজার জন্য পরিকল্পনা-রিপোর্ট তৈরি হবে। পাশাপাশি, ‘জাইকা’-র জল প্রকল্প শেষ হলে পুঞ্চা, বরাবাজার, মানবাজার ১, পুরুলিয়া ১ ও আড়শার নলবাহিত পানীয় জলের সংযোগ না-থাকা ৫৪৫টি মৌজায় সংযোগ পৌঁছবে, আশা প্রশাসনের।
পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য অভিযোগ, “কেন্দ্র সরকারের ‘জলজীবন মিশন’ প্রকল্পের নাম বদলে হয়েছে ‘জলস্বপ্ন’। নাম বদলানোয় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রকল্প কবে শেষ হবে, সংশয় রয়েছে। তবে আমরাও চাই, সকলে জল পাক।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, “খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় এসে পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে উষ্মা জানিয়েছেন। আমরা নিয়মিত দাবি জানিয়েছি জল-সমস্যা মেটানোর। তা মিটলে সকলের
জন্যই ভাল।”
পক্ষান্তরে, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য) সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, “পুরুলিয়ার মতো জেলায় বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ অভাবনীয়। অল্প সময়ে বহু বাড়িতে জল পৌঁছেছে। প্রকল্প শেষ হলে, মানুষ বাড়িতেই বিশুদ্ধ জল পাবেন। জল পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করবে ‘জলস্বপ্ন’।”
(শেষ)