—প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে এসেছেন তাঁরা দু’জনেই। সিউড়ি ১ পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ নম্বর আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন দু’জনেই। কিন্তু, দলের প্রতীক পেয়েছেন এক জনই। সেই ক্ষোভে বিজেপি নেতার উপরেই চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠল অন্য জনের বিরুদ্ধে। বুধবার সিউড়িতে বিজেপি জেলা কার্যালয়ের এই ঘটনায় বেশ আলোড়ন পড়েছে। অন্য দিকে, দলের প্রতীক তাঁদের না-দিয়ে তৃণমূল ছেড়ে আসা লোকজনকে দেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগে নির্দল হিসাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত সমিতিরই ভুরকুনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক বিজেপি পদাধিকারী।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে কিছু মাস আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা গৌরচন্দ্র দাসকে পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী করার কথা ঠিক করেছিল। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই তিনি ভিন্ রাজ্যে ছিলেন, যাতে তাঁর মনোনয়ন প্রত্যাহার না করানো যায়। গৌরের দাবি, সেখানেই তিনি জানতে পারেন, সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ওই পঞ্চায়েত সমিতিরই বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজীব চট্টোপাধ্যায়কে ১৩ নম্বরে প্রার্থী করা হচ্ছে। দলীয় প্রতীকও পেয়েছেন রাজীব। এ দিন সিউড়িতে ফিরে বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা কড়িধ্যায় দলীয় সংগঠনের দায়িত্বে থাকা শ্যামসুন্দর গড়াইয়ের উপরে গৌরচন্দ্র চড়াও হন বলে অভিযোগ।মারামারির পরিস্থিতি তৈরি হলে উপস্থিত দলীয় কর্মীরা গৌরকে আটকালেও দীর্ঘক্ষণ বচসা চলে।
গৌর বলেন, “প্রতীক দেওয়ার ১০ মিনিট আগে পর্যন্তও জেলার সাধারণ সম্পাদক আমাকে বলেন, আমিই প্রতীক পাচ্ছি। তার পর যখন শুনলাম অন্য জন প্রতীক পাচ্ছেন, তখন আমি আমার প্রশ্ন নিয়ে কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি।” তাঁর দাবি, “জেলা সাধারণ সম্পাদক আমাকে নির্দল হয়ে লড়তে বলেন এবং আমার হয়ে ভোট প্রচার করবেন বলে জানান। আমার ধারণা দলে দুটো গোষ্ঠী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি বিজেপির সমর্থক, নির্দল হয়ে লড়ব না।”
অন্য দিকে, শ্যামসুন্দরের দাবি, “এক জন প্রার্থিপদ প্রত্যাশী আমার কাছে এসে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কেন প্রতীক পাননি। তবে, ওই পঞ্চায়েত সমিতির ছবিটা আমার কাছেও পরিষ্কার নয়।” যদিও বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বাবন দাসের বক্তব্য, “একই আসনে একাধিক মনোনয়ন জমা পড়লে জেলা নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেন, যোগ্যতরকে প্রতীক দেওয়া হবে। সেই মতো রাজীব চট্টোপাধ্যায় ওই আসনে প্রতীক পেয়েছেন। এতে শ্যামসুন্দরকে জড়ানোর কোনও অর্থই হয় না।’’
প্রার্থিপদ ঘিরে গেরুয়া শিবিরের কোন্দল সামনে এসেছে ভুরকুনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও। দলের প্রতীক না-পেয়ে নির্দল থেকে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক জন বিজেপি পদাধিকারী। দলের সিউড়ি ৪ মণ্ডল সভাপতি উদয় হাজরার দাবি, ‘প্রার্থী নির্বাচনে প্রতি এলাকায় মণ্ডল সভাপতি গুরুত্ব পেয়েছেন। কিন্তু, আমার এলাকায় আমার তালিকা মান্যতা পায়নি। দলের প্রতীক পেয়েছেন তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে আসা লোকজন। তাই যাঁরা যোগ্য প্রার্থী, তাঁরা নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ সূত্রের খবর, মনোনয়ন জমা দিয়েও পদ্ম-প্রতীক না-পাওয়ায় নির্দল হয়ে লড়বেন ওই মণ্ডলের সহ সভাপতি দীপালি সাঁতরা পাল, মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভাপতি প্রতিমা দাস, কিসান মোর্চার সম্পাদক তরুণ দলুইয়ের মতো পদাধিকারীরা।
এ ক্ষেত্রেও শ্যামসুন্দর গড়াইকে দায়ী করেছেন উদয়। তাঁর অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে তালিকা বদলে দেওয়া হয়েছে। এটা দলের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন নয়। শ্যামসুন্দরের দাবি, ‘‘যা হয়েছে, দলের জেলা সভাপতির নির্দেশে। মণ্ডল সভাপতি কী বলছেন বা দলের পদাধিকারীরা কেন নির্দল হয়ে লড়ছেন, তা নিয়েও জেলা সভাপতিই বলবেন।’’
বিজেপি-র এই অন্তর্কলহ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “বিজেপি বহু কষ্টে তৃণমূলের লোকদের দলে নিয়ে প্রতীক দিয়ে প্রার্থী খাড়া করার চেষ্টা করছে। এত কিছুর পরেও দলের বিবাদ আটকাতে পারছে না। তৃণমূলের বাতিলদের নিয়েই যদি দল করতে হয়, তাহলে একটি সর্বভারতীয় দলের ক্ষেত্রে এর থেকে দুর্ভাগ্য কিছু হতে পারে না।”