পুঞ্চার নরেন্দ্রপুরের টিকাকরণ কেন্দ্রে আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র
ধীরে ধীরে হলেও পুরুলিয়া জেলায় আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষ করে গত দু’সপ্তাহে পুরুলিয়ার পুঞ্চার একটি পঞ্চায়েত এলাকায় যে ভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তৎপরতা শুরু হয়েছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের।
দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গোটা জুলাইয়ে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা তেমন না বাড়লেও বুধবার জেলায় ‘অ্যাক্টিভ কেস’-এর সংখ্যা ৫০ ছুঁয়েছে। এর মধ্যে পুঞ্চা ব্লকেই আক্রান্তের সংখ্যা ২৯। সঙ্গে পুরুলিয়া শহরে পাঁচ, মানবাজার ১ ব্লকে চার, বাঘমুণ্ডিতে দুই, হুড়ায় দুই, ঝালদা ১ ব্লকে দুই ও রঘুনাথপুর ১ ব্লকে দু’জন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। সাঁতুড়ি, পাড়া, কাশীপুর ও ঝালদা ২ ব্লকেও মিলেছে আক্রান্তের হদিস।
এ দিকে, পুঞ্চা-সহ বিভিন্ন ব্লকে সংক্রমণ ছড়ানোয় কড়াকড়ি বাড়িয়েছে পুলিশ। জেলার প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশের তরফে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।
মাস্ক ছাড়া বাইরে না বেরনো, ‘নাইট কার্ফু’ মেনে চলা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে পুলিশ।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন জানান, গত সোমবার ও মঙ্গলবার কোভিড-বিধি না মানার জন্য ৬০১ জনকে গ্রেফতার এবং ৩৫টি মামলা রুজু করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, পুঞ্চার বাগদা পঞ্চায়েতের বাগদা ও নরেন্দ্রপুর লাগোয়া দু’টি গ্রামেই ২৯ জন আক্রান্তের হদিস মিলেছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গত দু’সপ্তাহ আগেও ওই এলাকায় কোনও আক্রান্তের খোঁজ ছিল না। কী ভাবে সংক্রমণ ছড়াল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, এলাকার কেউ কোনও আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তার থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।’’
বিডিও (পুঞ্চা) অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দু’টি গ্রামের একটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। কোভিড-বিধি মেনে ওই গ্রামের কিছুটা এলাকা ঘিরে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ করা হয়েছে। এ ছাড়া, অন্য আক্রান্তদের বাড়ি ঘিরে ‘মাইক্রো-কনটেনমেন্ট জ়োন’ তৈরি করা হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, গত রবিবার ও সোমবার ওই গ্রামের আঠারো ঊর্ধ্ব সকলকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনা নিয়ে পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুঞ্চার দু’টি গ্রামে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা থেকে শিক্ষা না নিলে সকলকে তার মাসুল গুনতে হবে। সংক্রমণ বাড়ছে জানার পরেও শহরে দেখছি, অনেকেই মাস্ক পরছেন না বা পরলেও থুতনিতে আটকে রেখেছেন। এঁরা বুঝতে চাইছেন না, এর পরিণাম কী হতে পারে।’’
এ দিকে, জেলায় ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের প্রেক্ষিতে টিকাকরণে গতি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এত দিন শহরের মানভূম ক্রীড়া সংস্থার মাঠে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হচ্ছিল। সেখান থেকে দৈনিক ৬০০ জনকে টিকা দেওয়া হত।
পুরুলিয়ার পুর-প্রশাসক মৃগাঙ্ক মাহাতো বলেন, ‘‘বুধবার থেকে হাজার জনকে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে টিকাকরণ কেন্দ্রের সংখ্যা আরও একটি বাড়ানো হয়েছে। মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনেও এ বারে টিকা দেওয়া হবে। মানভূম ক্রীড়া সংস্থার মাঠে মহিলাদের ও মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে পুরুষদের টিকা দেওয়া হবে।’’ পাশাপাশি, ধোবঘাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজ়ের টিকাকরণ যেমন চলছে তা চলবে বলে জানান তিনি। উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বুদ্ধদেব মণ্ডল জানান, দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পুরনো ক্যাম্পাসে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তান রয়েছে এমন মায়েরা মাতৃমঙ্গল বিভাগ থেকে টিকা পাবেন।