প্রতীকী ছবি।
বছরের প্রথম দিন যে ছবি মুরারাইয়ের ১ ব্লকের ডাকঘরের সামনে দেখা গিয়েছিল, নতুন বছরের চতুর্থ দিনে সেই একই ছবি দেখা গেল ইলামবাজার ডাকঘরের সামনে। শনিবার ভোররাত থেকে আধার কার্ড সংশোধনের জন্য ইলামবাজার ডাকঘরের সামনে লাইন দিলেন হাজারখানেক মানুষ। এ দিনও সকলের চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগেই ইলামবাজার পোস্ট অফিস থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিল শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আধার কার্ড সংশোধনের নাম লেখানো হবে ডাকঘরে। একই পরিবারের একজন লোক দু’টির বেশি নাম লেখাতে পারবেন না। একইসঙ্গে বলা হয়েছিল আধার সংশোধনের জন্য মোট ৫০০ জনের নাম লেখার পর তাঁদের কুপন দেওয়া হবে। সেই কুপন দেখিয়ে পরে তা সংশোধন করা হবে। সেই মতো শুক্রবার রাত থেকেই বহু মানুষ ঠান্ডা উপেক্ষা করেই লাইন দিতে শুরু করেন ইলামবাজার ডাকঘরের সামনে। খোলা আকাশের নীচে শিশির পড়া রাতে সোয়েটার, কম্বল, চাদর মুড়ি দিয়ে রাত কাটালেন অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। শনিবার তাঁদের অধিকাংশই দাবি করলেন, ‘‘মরিয়া হয়ে রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) ভয়ে।’’ কাউকে আবার বলতে শোনা গেল, ‘‘সিএএ-এনআরসি হোক বা না হোক আমি আমার নথি সংশোধন করাব।’’
তবে এত কিছুর পরেও এ দিন আধার সংশোধনের জন্য অনেকেই কুপন পান নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ইলামবাজার ডাকঘর খোলার পর নাম লেখানোর জন্য ও কুপন নেওয়ার জন্য এক প্রকার হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সেই বিশৃঙ্খলার জেরে ডাকঘরের সামনে দেওয়া লাইনে ভেঙে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায় ইলামবাজার থানার পুলিশ। বিশৃঙ্খলার কারণে এ দিন ডাকঘর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় কুপন দেওয়ার কাজ। বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় পরবর্তী তারিখে পরে জানানো হবে। ইলামবাজার ডাকঘরের পোস্টমাস্টার উৎপল সাহা বলেন, ‘‘নাম লেখানোর সঙ্গে কুপন দেওয়ারও কাজ চলছিল। কিন্তু হঠাৎই লাইনে থাকা মানুষজন নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন যার কারণে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তার ফলে এ দিন ১০০টির মতো কুপন দেওয়ার পর বাধ্য হয়ে নাম লেখা ও কুপন দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। খুব তাড়াতাড়ি আঁধার সংশোধনের জন্য নাম লেখার ও কুপন দেওয়ার পরবর্তী দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হবে।’’
রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষকেই এ দিন আধার কার্ড সংশোধনের কুপন না পেয়েই নিরাশ হয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হয়। ইলামবাজারের খাদিমপুকুর থেকে আসা তমোজিৎ মণ্ডল, নাসির উদ্দিন, জালাল নগর থেকে আসা আনিসুর মোল্লারা বলেন, ‘‘রাতভর লাইন দেওয়া সত্ত্বেও এ দিন আধার সংশোধনের জন্য কুপন বা নাম নথিভুক্ত না করেই খালি হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে আমাদের। এই নিয়ে ৪-৫ মাস ধরে ঘুরছি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই আইনের ফলে মানুষকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই সরকার যেন এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করে।’’