বালি খাদানের প্যাড।
ছোট্ট কাগজের স্লিপ। আর তারই বড় ভূমিকা বালি খাদানের অবৈধ কারবারে। বীরভূম জেলার কারবারিদের কাছে সেই স্লিপের নামই 'প্যাড'।
বীরভূম জেলায় এই প্যাড কারবারের ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হলেও প্রশাসন নীরব বলে অভিযোগ। তবে প্যাড নিয়ে বালি তোলা কিছু গোপন কাজ নয়। সবটাই চলে প্রকাশ্যে।
বীরভূমে অবৈধ বালি ব্যাবসার অভিযোগ নতুন নয়। এ নিয়ে রাজনৌতিক অশান্তি থেকে শুরু করে প্রানহানি লেগেই থাকে। একই ভাবে বালি ব্যবসায় চলতেই থাকে মাফিয়া রাজ। আর এর পিছনে রয়েছে 'প্যাড'।
কী ভাবে চলে এই প্যাডের কারবার? এই ব্যবসায় যুক্তদের কথা থেকেই জানা গিয়েছে, জেলার সব বালি ঘাটে পৌছে যায় ছোট্ট কাগজের স্লিপ। যাতে থাকে গাড়ির নম্বর, ঘাটের নাম আর তারিখ। এটাই প্যাড। প্রথমে বালির ঘাটে একটি বালির গাড়ি লোড হয়। তার পর, চালকের হাতে দিয়ে দেওয়া হয় প্যাড। যা নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয় গাড়িটি। প্যাড না থাকলে গাড়ি বের করা যাবে না-- এটাই বালি মাফিয়াদের তৈরি করা নিয়ম। পুলিশও না কি মান্যতা দেয় এই প্যাডকে। রাস্তায় কোনও সমস্যাই হয় না চালকের কাছে প্যাড থাকলে।
জানা গিয়েছে, এই প্যাড কারবারের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত। তবে তার মধ্যেই বেশি করে শোনা যায় দু'টি নাম। তেওয়ারি ও পাঠক। তারাই না কি এই প্যাড কারবারের মাথা। প্যাড থাকলে সরকারকে প্রাপ্য রাজস্ব না দিয়েও খাদান থেকে বিনা বাধায় বালি তোলা যায়। ফলে সরকারি খাতায় জমাই পড়ে না টাকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালি ঘাট ব্যবসায়ীর বক্তব্য, এই প্যাডের কারণেই জেলায় অবৈধ বালি ঘাটের সংখ্যা বাড়ছে। তাঁর কথায়, "আমরা নিয়ম মেনে সরকারের থেকে লিজের মাধ্যমে বালি ঘাট নিয়েছি। এর পরও আমাকে প্যাড নিয়ে, আবার প্রশাসনের কাছে চালান নিয়ে বালির ব্যবসা করতে হচ্ছে।" এটা না করলে ব্যবসা চালানো যাবে না বলেও দাবি ওই ব্যবসায়ীর।
প্যাড কারবারের কারণে বালির দামও বাড়ছে বলে দাবি। এমনিতে একটি ডাম্পার গাড়িতে বালি তুলতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। সেখানে প্যাড-সহ খরচ পড়ে যায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর পরেও খরচ আছে। ট্রাক মালিকদের দাবি, ঘাট থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় বালি কেনা হলেও প্রত্যেক থানা এলাকায় টাকা দিতে দিতে সেটা প্রায় ২০ হাজার টাকা হয়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষকে প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয় বালি।
জানা গিয়েছে, শুরুতে প্যাডের জন্য খরচ ছিল ১ হাজার টাকা। এখন সেটাই হয়ে গিয়েছে দেড় হাজার টাকা। শুধু পুলিশই নয়, প্যাডের টাকার রাজনৈতিক ভাগ বাটোয়ারা হয় বলেও অভিযোগ। গোটা বিষয়টি শোনার পর বীরভুমের জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, "আমি এখানে সদ্যই যোগ দিয়েছি। বিষয়টা ঠিক জানা নেই। তবে নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব।"