প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূলের ‘দুই গোষ্ঠীর’ সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইলামবাজারের ধরমপুর পঞ্চায়েতের শুনমুনি গ্রাম। বুধবার রাতের ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন দু’পক্ষের ৬ জন। তাঁদের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য গোষ্ঠী-বিবাদের কথা মানতে চাননি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুনমুনি গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে পশ্চিমপাড়া ও দক্ষিণপাড়া। শুনমুনি গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় একটি মসজিদের সামনে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। সেখানে গ্রামের তৃণমূল কর্মী মান্নান শেখ-সহ পশ্চিমপাড়ার বেশ কয়েক জন সন্ধ্যার পরে আড্ডায় বসতেন। তৃণমূলের ধরমপুর অঞ্চল সভাপতি শেখ নাজিরের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই মান্নান পরিচিত। দক্ষিণপাড়ার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশও দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গায় বসার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এই গোষ্ঠী আবার ধরমপুর পঞ্চায়েতের সদস্য রোকিয়া বিবি এবং এক কর্মাধ্যক্ষের অনুগামী।
এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত মাসখানেক আগে। এর পরে ইলামবাজার থানার পুলিশ দু’পক্ষকেই থানায় ডেকে নির্দেশ দিয়েছিল, ওখানে যেন কোন পক্ষই না বসে। কিছুদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও দিন দুয়েক আগে থেকে গ্রামের ওই জায়গায় মান্নান ও তাঁর সঙ্গীরা আবার বসতে শুরু করেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণপাড়ার তৃণমূল কর্মীরা ওই জায়গায় বসা নিয়ে মান্নানদের আপত্তি জানান। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। তার পরেই শুরু হয় সংঘর্ষ। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ এলে পুলিশের সামনেই চলে দু’পক্ষের লোকজনের হাতাহাতির। মান্নান শেখ-সহ আহত হন ছ’জন। একটি গাড়িতও ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনার পর থেকে গ্রামে থমথমে পরিবেশ রয়েছে। ফের যাতে নতুন করে গ্রামে অশান্তি না ছড়ায়, তার জন্য গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, এলাকায় রোকিয়া-শিবির ও নাজির-শিবিরের মধ্যে বিবাদ অনেক দিনের। সেই বিবাদই বুধবার রাতে সংঘর্ষের চেহারা নেয়। মান্নান শেখের স্ত্রী আসনিহারা বিবি বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির পাশের জায়গায় আমাদের বসার অধিকার রয়েছে। অন্য গোষ্ঠীর লোকেরা বেপাড়া থেকে এসে আমাদের এখানে ঝামেলা সৃষ্টি করছে। আমরা চাই গ্রামে শান্তি ফিরে আসুক।’’ পঞ্চায়েত সদস্য রোকিয়া বিবির আবার দাবি, ‘‘গ্রামের একটি জায়গায় বসাকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। অঞ্চল সভাপতি শেখ নাজিরের মদতেই আমাদের লোকজনদের উপরে হামলা চালানো হয়েছে।’’ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে নাজির বলেন, ‘‘এটি একটি গ্রাম্য বিবাদ। এর সাথে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ একই বক্তব্য তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি ফজলুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি, ওটা গ্রাম্য বিবাদ। এটা আমাদের দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। যদিও পুলিশ-প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও পক্ষের তরফ থেকেই লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।