অনুষ্ঠান:আমোদপুরের মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠান্ডা থাকলেও সকাল থেকেই ঝকঝকে আকাশ। আমোদপুরে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য এক কথায় আদর্শ এক পরিবেশ। দুপুর দু’টোয় সভার সময় নির্দিষ্ট থাকলেও মানুষের ঢল নামতে শুরু করে ঢের আগে থেকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হয়ে যায়। বেলা ১২টার মধ্যেই হাজির হন জেলার দুই মন্ত্রী, সমস্ত বিধায়ক ও নেতারা এবং অবশ্যই অনুব্রত। হাজির জেলা প্রশাসনের সমস্ত আমলা। মুখ্যমন্ত্রী কপ্টারে আসবেন এমন সম্ভাবনায় সভাস্থলের উল্টো দিকে তৈরি হয়েছিল হ্যালিপ্যাড। বেলা ২টো ১৭ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এলেন বোলপুর থেকে সড়ক পথেই। জমে ওঠে সভা।
সভায় এসে পূর্ব নির্ধারিত সূচিতে থাকা ঝাড়গ্রামে সাত দিন ব্যাপী জঙ্গলমহল উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর একে একে সবুজশ্রী, কন্যাশ্রী, উদ্যানপালন, কৃষি, বনবিভাগ, সংখ্যালঘু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন, বাংলা আবাস যোজনা সহ নানা প্রকল্পে উপভোক্তাদের পরিষেবা প্রদান ও একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। এরপরই বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপিকে নিশানা করেন। তিনি তালাক বিল, অসমে বাঙালি বিদায় নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন বিজেপি সরকারকে। জেলায় এসে বিজেপি নেতাদের প্ররোচনা মূলক কথা নিয়ে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে বিঁধুন, সেটাই চেয়েছিল জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
তিন দিনের সফরের মধ্যে বুধ ও বৃহস্পতি আমোদপুর ও জয়দেবে মুখ্যমন্ত্রীর দুটি সভা থাকলেও আমোদপুরের সভাই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এই মঞ্চ থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন, শিলান্যাস ও পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান হলেও জনসভায় এই প্রথম আমোদপুর মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত করানোর মধ্যে ভিন্ন কৌশল ছিল তৃণমূলের। তৃণমূল অন্দরের ব্যাখ্যা: মনিরুল ইসলামের অসুস্থতার সুযোগে লাভপুর এলাকায় সংগঠন দুর্বল হয়েছে। এ ছাড়াও সাঁইথিয়ার আমোদপুরে বিজেপি-র আড়েবহরে বাড়ছে। আমোদপুরে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষও হয়েছে একাধিকবার। রয়েছে মুকুল রায় কাঁটাও। কেননা সাঁইথিয়া থেকেই মুকুল শিবিরে যোগ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিবেশকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপিও।
এই পরিস্থিতিতে একবার ‘দিদি’কে আনা গেলে সব দিক সামলানো যাবে, এমন আশা ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। এ দিন সভা থেকে বিজেপিকে নিশানা করে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতেই কাজ হয়েছে— দিনের শেষে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সাকুল্যে ৩৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন মমতা। খুশি অনুব্রত মণ্ডলও। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনের সভায় ১ লক্ষ লোক এনেছি। বৃহস্পতিবার জয়দেবের সভায় লোক হবে এর থেকেও বেশি।’’
সাড়ে তিনটের সময় মঞ্চ থেকে বোলপুরের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পরই লাল ধুলো উড়িয়ে বাড়ির পথ ধরে জনতা। তবে মন খারাপও কিঞ্চিত রয়েছে। এ দিন অচল পাথল শিল্পাঞ্চলের সমস্যা মেটানো নিয়ে কিছু বলেননি মমতা। আমোদপুর বিশেষ কোনও প্রকল্পও ঘোষণা করতেও শোনা যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিন পথে নেমে দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ। জেলায় বেসরকারি বাসের দেখাই মেলেনি।