মঞ্চে বিরোধীদের যোগদান। নীচে কর্মীদের উচ্ছ্বাস। সোনামুখীতে। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে যখন করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন তৃণমূলের সমাবেশে ‘মাস্ক’ না পরা এবং দূরত্ব-বিধি বজায় না রাখার অভিযোগ উঠল। রবিবার সোনামুখী শহরে তৃণমূলের কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠান হয়। সেটি নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। তার উপরে যোগ হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছু নেতার অনুপস্থিতি ও মন্তব্য।
এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল, মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা-সহ জেলার প্রথম সারির অনেক তৃণমূল নেতা। দেখা গেল, ঘেঁষাঘেঁষি করে পাতা চেয়ারে প্রচুর মানুষ বসে। অনেকের মুখেই ‘মাস্ক’ নেই। কেন মানা হল না বিধি? শুভাশিসবাবুর বক্তব্য, “বহু দিন রাজনৈতিক আলোচনা না হওয়ায় অনেকেই এসে পড়েছেন। তা ছাড়া, বিজেপি ও সিপিএম ছেড়ে সোনামুখীর প্রায় ৫০০টি পরিবারের সদস্যেরা এ দিন তৃণমূলে যোগ দিলেন। পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষার চেষ্টা করেছি। কোনও ক্ষেত্রে তা মেনে চলা হয়তো সম্ভব হয়নি।’’ তবে সকলেরই মুখে মাস্ক ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ দিন মঞ্চে হাজির ছিলেন সোনামুখীর প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দিপালী সাহা, ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটে, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ছিলেন না সোনামুখীর বিদায়ী তৃণমূল পুরপ্রধান তথা পুরসভার প্রশাসক সুরজিৎ মুখোপাধ্যায় এবং সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কিছু তৃণমূল সদস্য।
সুরজিৎবাবু বলেন, “আমাকে কেউ সভার কথা জানাননি। তবে মাইকে প্রচার হচ্ছে তা শুনেছি। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের অনেকেই এ দিনের কর্মসূচির কথা জানতেন না। অনুষ্ঠানে শহর তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন মুখোপাধ্যায়কেও ডাকা হয়নি। এটা তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়।’’ সৌমেনবাবুর দাবি, “আমি যেখানে কাজ করি, সেখানে এক জনের হাতে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়ে চলে গিয়েছিলেন দলের কেউ। কিন্তু ওই বিষয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেননি কোনও নেতা।’’ শুভাশিসবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমি সুরজিৎবাবুকে ফোন করেছি। চিঠিও করা হয়। তাঁর এক আত্মীয় অসুস্থ বলেই তিনি আসতে পারেননি। আমরাও তাঁকে আসতে জোর করিনি।”
সুরজিৎবাবু বলেন, “২০১৮ সালে স্টেশন মোড়ে তৃণমূলের একটি কার্যালয় তৈরি হয়। সেটি এখনও আছে। সর্বক্ষণের কর্মীও রয়েছেন সেখানে। একই শহরে আরও একটি কার্যালয় খোলার কারণ শুভাশিসবাবুরা নিশ্চয় বলতে পারবেন।” শুভাশিসবাবুর দাবি, “দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সোনামুখীতে দলটা বসে গিয়েছিল। তাই দলীয় কার্যালয় খুলে যুবদের চাঙ্গা করা হল।”
এই পরিস্থিতিতে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। বিজেপির বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি হরকালী প্রতিহার বলেন, “শুভাশিসবাবুরা সোনামুখীর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে এখন জেরবার। তৃণমূল কর্মীদের হাতে তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দিদির কাছে নাম কিনছেন।’’
সোনামুখীর সিপিএম বিধায়ক অজিত রায় বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে কেউ তৃণমূলে গেছেন বলে আমার কাছে খবর নেই। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দিন দিন তৃণমূল ভেঙে যাচ্ছে।’’