প্রতীকী ছবি
দেশের অর্থনীতি এখন কার্যত চাহিদা-শূন্য অবস্থায়। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করলেন, তাতে কি পরিস্থিতির বদল হবে? তবে কৃষি থেকে স্বাস্থ্য, পর্যটনে মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেখার দরকার, তার মধ্যে কতখানি বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলা পাচ্ছে।
কৃষিতে পরিকাঠামোর অভাবে এই দুই জেলার প্রান্তিক চাষিরা এখনও নানা অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। ফড়েরাজের জন্য ফসলের ন্যায্য দাম পান না চাষিরা। তবে বাজেটে চাষির আয় দু’বছরের মধ্যে দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে চাষের জন্য বাজেটে এ বার অর্থবরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সেই অর্থে সেচ ব্যবস্থার উন্নতিকরণ, কৃষিজাত দ্রব্য রফতানির জন্য পিপিপি মডেলে কিসান রেল চালু, কৃষিপণ্য মজুতে হিমঘর বানানো, দেশ জুড়ে আরও কৃষককে ফসল বিমার আওতায় আনা, কৃষিঋণ প্রদান, উদ্যানপালন দফতরের আওতায় চাষাবাদ বাড়ানো ও চাষিদের সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পসেট দেওয়া-সহ নানা সুবিধার কথা ঘোষণা হয়েছে।
কৃষিপণ্য মজুত করে রাখার সুযোগ বা সরকারি ভাবে বাজার গড়ে সরাসরি কৃষকদের কৃষিপণ্য বিক্রির সুযোগ করে দিলে চাষিরা প্রকৃতই উপকৃত হবেন। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার কৃষকেরা এখনও সেই সুযোগ পান না। কম ভাড়ায় রেলপথে জেলার চাষিদের অন্যত্র ফসল পরিবহনের ব্যবস্থা করা হলেও চাষিদের কাছে বাইরের বাজার ধরার সুযোগ থাকবে। অনলাইনে কৃষিপণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকৃত চাষিদের সুবিধা করে দিতে হলে পরিকল্পিত ভাবে গোটা প্রক্রিয়াটিকে বাস্তবায়িত করতে হবে। না হলে সেই চাষিদের লাভের গুড় অন্য শ্রেণির খাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
একশো দিনের প্রকল্পের উপরে জেলার বেশির ভাগ দিনমজুর নির্ভর করেন। এই প্রকল্প নিয়ে কোনও কথা অর্থমন্ত্রীর মুখে শুনতে পাইনি। এমনকি শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের কোনও দিশাও নেই বাজেটে।
‘সাগরমিত্র’ প্রকল্পের মাধ্যমে মৎসচাষিদের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। জেলায় বহু মৎস্য চাষি রয়েছেন। তবে ওই প্রকল্প থেকে কী কী সুযোগ মিলবে, আদৌ বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার মৎস্য চাষিরা এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারবেন কি না তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।
জেলার তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর ও ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প আটকে রয়েছে। এ বারের বাজেটেও ওই দুটি প্রকল্প নিয়ে কোনও ঘোষণা শুনতে পাইনি। অথচ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হলে জেলার পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটত। ঘোষিত প্রকল্পগুলির মধ্যে আবার কতটা বাস্তবায়িত হয়, সেটাও দেখার।
(লেখক বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক)