বসন্তোৎসব বাতিল হওয়ায় হলুদ শাড়ির বিক্রি নেই। নিজস্ব চিত্র
করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখে বসন্ত উৎসব বাতিলের ঘোষণায় বোলপুর-শান্তিনিকেতনের ব্যবসায়ীদের একাংশের মাথায় হাত।
উৎসব না হওয়ায় বড় রকমের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বোলপুর-শান্তিনিকেতনের ওই ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পৌষমেলা ও বসন্ত উৎসব, এই দুই উৎসবের দিকে তাঁরা সারা বছর তাকিয়ে থাকেন। কারণ, বছরভর পর্যটকের আনাগোনা লেগে থাকলেও এই দুই উৎসবে বিক্রিবাটা অনেক বেশি হয়। এ বারে পৌষমেলার সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অনেক পর্যটক না আসায় তেমন ভাবে লাভের মুখ দেখেননি ব্যবসায়ীরা। তার উপরে ভাঙা মেলাও হয়নি। ফলে বসন্ত উৎসবে বাজার ভাল হবে বলে আশায় ছিলেন ব্যবসায়ীরা। গত বার বসন্ত উৎসবে আড়াই লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটেছিল শান্তিনিকেতনে। এ বার নানা কারণে বসন্ত উৎসব নিয়ে টানাপড়েন চললেও শেষ পর্যন্ত দোলের দিনই উৎসব হচ্ছে সিদ্ধান্ত হওয়ায় সকল স্তরের ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। মজুতও করেছিলেন উৎসবের বিভিন্ন ধরনের সাজপোশাক থেকে শুরু করে খাবারের সামগ্রী।
কিন্তু শেষ বেলায় করোনার ধাক্কায় উৎসব বাতিলের সিদ্ধান্তে সে সমস্ত আয়োজন মাটি হয়ে গেল। বোলপুর-শান্তিনিকেতনের কাপড় ব্যবসায়ী, টোটো চালক, খাবারের দোকানের মালিক থেকে রং বিক্রেতা— সকলেই এখন ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। কিছু কাপড়ের দোকানের মালিক জানালেন, বসন্ত উৎসব উপলক্ষে হলুদ শাড়ি ও সাদা পাঞ্জাবি বিপুল পরিমাণে মজুত করা হয়েছিল। উৎসব না হাওয়ায় সেই সব শাড়ি-পাঞ্জাবির কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা চিন্তায় পড়েছেন। বোলপুরের কাপড় ব্যবসায়ী অরবিন্দ কুমার, বিনয় কপূররা বলেন, ‘‘এই সময়ই আমাদের বাজার সব থেকে ভাল থাকে। এ বছর বসন্ত উৎসবে টানা তিন দিন ছুটি থাকায় ভেবেছিলাম বেচাকেনা আরও ভাল হবে। কিন্তু উৎসব বাতিল হয়ে যাওয়ায় আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’’
শহরের রেস্তোরাঁ এবং ছোট ছোট খাবারের দোকানগুলির মালিকেরাও চিন্তায়। উৎসবের দিনটিতে যে-সব পর্যটক আসেন শান্তিনিকেতনে, তাঁরা ওই সব রেস্তোরাঁর বড় ক্রেতা। সেই সংখ্যাটা খুব কম নয়। উৎসব বাতিল হওয়ায় ওই ভিড়টা এ বার আর হবে না। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী শান্তি সিংহ, বিজয় সাও বলেন, ‘‘শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের দিনটির দিকে সকলেই চেয়ে থাকেন। এ বার প্রথম থেকেই দোলে উৎসব হবে না বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও রাজ্য সরকার যেভাবে সহযোগিতা করেছে, তাতে ভেবেছিলাম, সব ঠিকঠাক হবে। সেই মতো আমরাও হোটেলে আনাজ-মাছ-মাংস মজুত করেছিলাম। হঠাৎ বসন্ত উৎসব বাতিল হওয়ায় আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল। জানিনা সেই ক্ষতি কিভাবে পূরণ হবে!’’
উৎসব না হওয়ায় তাঁদের তৈরি সামগ্রীর বিক্রিও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন হস্তশিল্পীরা। কারণ ব্যাগ থেকে শুরু করে পাঞ্জাবি, গেঞ্জিতে বসন্তের গান ও কবিতার লাইন প্রতিবারই তুলে ধরা হয়। এই বিপণন সামগ্রীগুলি বসন্ত উৎসব কেন্দ্রিক। কবিগুরু হস্ত শিল্প উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক আমিনুল হুদা বলেন, ‘‘ওই শিল্পীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’’ একই আশঙ্কা টোটো চালকদের। বসন্ত উৎসব না হওয়ায় পর্যটক সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করছেন টোটো চালক রাজকুমার সাহা, রাজু বীরবংশীরা। তাঁদের কথায়, ‘‘যাঁদের আগাম বুকিং আছে, তাঁরা আসবেন। কিন্তু, দোলের দিন যাঁরা আসতেন, তাঁরা তো এ বার আর আসবেন না। ফলে, আমাদের উপার্জন এ বছর ভাল হবে না।’’