LPG price hike

উনুন, কাঠের দিকে ঝুঁকছে অনেক স্কুলই

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মিড-ডে মিল রান্না হয় জেলায় এমন স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৮৫০টি (প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, এসএসকে এমএসকে মিলিয়ে)।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:০০
Share:

মুরারই ১ ব্লকের বঠিয়া জুনিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ভাবেই মাটির উনুনে কাঠ দিয়ে রান্না হয়। ছবি: তন্ময় দত্ত

স্কুলের রান্নাঘরে বেশ কয়েক বছর ধরে মিড-ডে মিল রান্না হয়েছে এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করেই। সিলিন্ডার এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু, তার মধ্যেই সোমবার রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ কিনেছে দুবরাজপুরের চণ্ডীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়।

Advertisement

আরও কোনও উপায় নেই বলেই কাঠ কিনতে হয়েছে বলে জানালেন স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অশেষ ঘোষ। তিনি জানান, ৭২ জন পড়ুয়া। ৮৫ শতাংশের মিড-ডে মিলের খরচ পান তাঁরা। যে-ভাবে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বাড়ছে, তাতে মিড-ডে মিলের জন্য পড়ুয়াদের মাথাপিছু বরাদ্দের একটা বড় অংশই সিলিন্ডার কিনতে খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘সিলিন্ডার কিনতেই টাকা পুরোলে পাতে কী পড়বে! বাধ্য হয়েই কাঠ কিনেছি। সিলিন্ডার শেষ হলেই কাঠে রান্না শুরু করতে হবে।’’

শুধু দুবরাজপুরের ওই স্কুলই নয়, রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম সাড়ে এগারোশো পার হওয়ায় অনেক স্কুলেই মিড-ডে মিলের জন্য মাটির উনুন ও বিকল্প জ্বালানি খুঁজছে। শিক্ষকদের একাংশ বলছেন, কেন্দ্রীয় দল ঘুরে যাওয়ার পরে এই বিষয়ে প্রকাশ্য ঘোষণা সম্ভব হচ্ছে না হয়তো, কিন্তু এ ছাড়া আর উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা। যে-সব স্কুলে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছেছে অথচ পড়ুয়ার সংখ্যা একশোর কম, মূলত সমস্যা পড়েছে সেগুলিই। মিড-ডেল মিলের জন্য পড়ুয়া পিছু প্রাথমিকে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা আর এবং উচ্চ প্রাথমিকের জন্য ৮ টাকা ১৭ পয়সা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া, ১৬ সপ্তাহের জন্য পড়ুয়া পিছু সপ্তাহে ২০ টাকা বাড়তি বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি মাসেই সে বরাদ্দ শেষ হয়ে যাবে, দাবি বিভিন্ন স্কুলের। সেই সব স্কুলের শিক্ষক এবং মিড-ডে মিলের রান্নায় দায়িত্ব থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বলছেন, “মাথাপিছু বরাদ্দের সঙ্গে জ্বালানির দামও ধরা হয়। মাটির উনুনে কাঠকুটো জ্বালিয়ে রান্না করলে গ্যাসের থেকে খরচ অনেকটাই কমবে।”

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মিড-ডে মিল রান্না হয় জেলায় এমন স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৮৫০টি (প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, এসএসকে এমএসকে মিলিয়ে)। পড়ুয়াদের ফুসফুস ভাল রাখতে এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে ২০১৮ সালেই অধিকাংশ স্কুলে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও বেশ কিছু শিক্ষাঙ্গনে রান্নার গ্যাস পৌঁছনো যায়নি। সেই স্কুলগুলির অন্যতম বেলসাড়া প্রাথমিক স্কুল। ৬৩ জন পড়ুয়া। প্রধান শিক্ষক তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘রান্নার গ্যাসের সংযোগ পাওয়ার জন্য একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছি। তবে, এখন মনে হচ্ছে, সংযোগ পেলেও খরচে পোষাত না।’’ একই বক্তব্য মুরারই ১ ব্লকের বঠিয়া জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুমিত কুমার প্রসাদের। ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৬৬।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের একাংশ জানান, মাস পাঁচেক আগে পড়ুয়া পিছু মিড-ডে মিলের রান্নার খরচ ৯.৬ শতাংশ বাড়ানো হলেও তা যথেষ্ট নয়। প্রাথমিক (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) ও উচ্চ প্রাথমিক (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) স্কুলে প্রতি পড়ুয়ার জন্য মিড-ডে মিলের বরাদ্দ যৎসামান্য। সেখানে বাজারে একটি ডিমের দামই ছয় থেকে সাত টাকা! বাস্তব হল, শুধু ডাল-ভাত আর একটি তরকারি দিলেও বরাদ্দ কম পড়ে যায়। সেখানে ডিম দেওয়া বিলাসিতারই শামিল। তা-ও রান্নার গ্যাসে কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছিল বলে ডিম দেওয়া যাচ্ছিল। এখন সিলিন্ডারের যা দাম, তাতে রান্নার জন্য কাঠ আর উনুনই ভরসা। তাঁদের মতে, মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement