ভেষজ আবির। প্রতীকী চিত্র।
কয়েক বছর ধরেই রাসায়নিক মেশানো আবিরের বিকল্প হিসেবে ভেষজ আবির তৈরি করছিলেন জেলার সাঁইথিয়া পুর এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। গত বছর থেকেই সেই আবির বিপণনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকারের কৃষি বিপণন দফতর। গতবার কলকাতা জুড়ে সুফল বাংলার দোকানে বিক্রি হয়েছিল বীরভূমে তৈরি সেই ভেষজ আবির। এ বার চাহিদা আরও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন সুফল বাংলার কর্তারা।
কৃষি বিপণন দফতরের (সুফল বাংলা) প্রকল্প আধিকারিক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তত্ত্বাবধানে ভেষজ আবির তৈরি করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। মূলত সাঁইথিয়া থেকে আমরা ভেষজ আবির নিচ্ছি। সুফল বাংলার বিপণিকে আমরা নিরাপদ ভেষজ আবিরকে জনপ্রিয় করতে কাজে লাগাচ্ছি।’’
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার সা কুইন্টাল ভেষজ আবির কলকাতা যাচ্ছে। শহরের মোট ৪৩০টি সুফল বাংলা বিপণিতে তা বিক্রি হবে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিতাভ বিশ্বাস জানান, বিপজ্জনক রাসায়নিক মেশানো আবিরের বিকল্প ভেষজ আবির তৈরির পথ দেখিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত। তিনি ভেষজ আবিরকে জনপ্রিয় করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। কিন্তু সাঁইথিয়ার আগে বাণিজ্যিক ভাবে সেটা সফল ছিল না।
অমিতাভ বলছেন, ‘‘রাসায়নিক ব্যবহারে যে উজ্জ্বলতা আসে সেটা ভেষজ আবিরে মেলে না। সচেতন মানুষ ছাড়া কেনেন না। বিপণনের এই অসুবিধা দূর করতে এগিয়ে এসেছে কৃষি বিপণন দফতর। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’
বছর পাঁচেক আগে সাঁইথিয়ায় একটি ট্রাস্টের উদ্যোগে স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ভেষজ আবির তৈরি শেখানো হয়। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অমিতাভ বিশ্বাস, বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মী দেবাশিস পালেরা এই উদ্যোগটির সঙ্গে জড়িত। অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্তেও একাধিকবার সাঁইথিয়া এসেছেন।
বর্তমানে ৩০ জন মহিলা কাজ করছেন আবির তৈরিতে। পালং শাক থেকে সবুজ, কাঁচা হলুদ, ঝরা পলাশ বা শিউলি ফুলের বৃন্ত ব্যবহার করে কমলা, হলুদ, মাদার গাছের ছাল থেকে গোলাপি রঙের, বিট থেকে লালচে আবির তৈরি হচ্ছে। ভেষজ আবির তৈরির সঙ্গে যুক্ত মণিকা ঘোষ, তপতী সাহানা, গৌরী ঘোষ বলছেন, ‘‘কষ্ট করে তৈরি আবিরের নিশ্চিত বাজার থাকলে সেটা অবশ্যই ভাল । স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ থাকে। চাহিদা বাড়লে সুযোগও বাড়বে।’’