বোলপুর টাউন লাইব্রেরির সামনে জঞ্জালের স্তূপ। —নিজস্ব চিত্র।
নামেই আন্তর্জাতিক শহর! অথচ, যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে আবর্জনা! নেই প্রয়োজনীয় পুর-পরিষেবা। নেই সরকারি প্রকল্পের রূপায়ণ। ভোটের বাজারে ঘুরে ফিরে সে সব ‘নেই’ নিয়েই জোর সরব বিরোধীরা।
বোলপুর শহরে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই রয়েছে সারা বছর। দেশ বিদেশের পর্যটন ও উচ্চশিক্ষার মানচিত্রে আলাদা জায়গা রয়েছে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের। এহেন পুর শহরের মুখ্য রাস্তার উপর বিভিন্ন ওয়ার্ডের জায়গায় জায়গায় নোংরা, আবর্জনার স্তূপ দিনের দিন পড়ে থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের। শহরের সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বোলপুর পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। কিন্তু কাজ না হওয়ায়, শহরজুড়ে নোংরা-আবর্জনার স্তূপ দেখে নাগরিকদের পাশাপাশি ক্ষোভ বাড়ছে পর্যটকদেরও। পুরভোটের আগে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচারে বেরিয়ে বিরোধীরা নোংরা, আবর্জনায় ভর্তি জঞ্জালযুক্ত শহরের ছবি বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরছেন। বৃহস্পতিবার দেখা গেল বোলপুর টাউন লাইব্রেরির সামনে স্তূপাকারে জমা এলাকার আবর্জনা। স্থানীয়দের দাবি, দিন কয়েক ধরে আসছে না পুরসভার গাড়ি। বিদায়ী সিপিএমের কাউন্সিলর স্নেহময় গুড়িয়ার আট নম্বর ওয়ার্ডে নোংরা জমছে স্তূপাকারে দিনের পর দিন। একই ছবি, শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপুর এলাকা, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সুরশ্রীপল্লি, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কালিমোহন পল্লি-সহ বিদায়ী পুর বোর্ডের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তৃণমূলের দখলে থাকা একাধিক ওয়ার্ডে। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। আবর্জনার স্তূপ থেকে গোটা পাড়াই ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধময় জঞ্জাল।
আবর্জনা জমা হয়ে রয়েছে খোদ পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায়। যেমন হাটতলা বাজার এলাকা, এগারো নম্বার ওয়ার্ডের রামকৃষ্ণ রোড-সহ একাধিক জায়গা। অভিযোগ, ওই এলাকাগুলিতে আবর্জনা ফেলার গাড়িকেই দেখা যায় না। জামবুনি, মাঠপাড়া, বিবেকানন্দ পল্লি, ইন্দিরা পল্লি-সহ নানা এলাকায় আবর্জনার স্তূপ পড়ে রয়েছে এলাকায় এলাকায়। ওয়ার্ডে নোংরা, আবর্জনা নিয়ে অল্প বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে প্রায় সব এলাকার বাসিন্দাদের।
বহুদিন ধরেই বোলপুর শহরের নোংরা আবর্জনা তুলে নিয়ে গিয়ে শহর লাগোয়া একটি জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে ফেলা হয়ে আসছে। মান্ধাতা আমলের সেই ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য, আর্বজনাকে দু’রকমের আলাদা করে ব্যবহারযোগী করার জন্য প্রাথমিক স্তরে আলোচনা হয়েছিল। বছর কয়েক আগে সার্ভে করিয়ে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কথা গড়িয়েছিল অনেক দূর। সেই মতো নেওয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরিকল্পনাও। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে, বাস্তবায়িত হইনি ওই পরিকল্পনা। ফলে বর্জ্য ‘রি-সাইক্লিং’ পদ্ধতি আজও বিশ বাঁও জলে। পরিকল্পনা মতো পচনশীল বর্জ্য থেকে না হয়েছে কোন জৈব সার তৈরি, না হয়েছে অন্য বর্জ্য থেকে ব্যবহার উপযোগী কোনও জিনিষ। শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ এবং বোলপুর পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বর্জ্য ‘রি-সাইকিলিং’ পদ্ধতির জন্য কথা হয়েছিল। সেই মতো বোলপুর পুরসভার সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে গিয়েছিল খড়গপুর আইআইটি। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হইনি।
ছ’ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী কিশোর দাস, সিপিএম প্রার্থী সৌরভ রায়, কংগ্রেস প্রার্থী ফারুক আহমেদ এবং এগারো নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী অশোক সাহানি, সিপিএমের উদয় ভকতদের অভিযোগ, নাগরিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ তৃণমূল পুর বোর্ড। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন শহরকে সাজিয়ে তোলার জন্য নেই কোনও উদ্যোগ। প্রশাসনের নেই হেলদোলও।
বোলপুর পুরসভার তৃণমূলের বিদায়ী পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত এবং উপ-পুরপ্রধান নরেশ চন্দ্র বাউরি বলেন, “শহরের আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে লায়েকবাজার বাইপাসের পাশে। ওই এলাকায় বোলপুর পুর-এলাকার শহরের নোংরা, আবর্জনা ফেলা হয়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নোংরা আবর্জনা পড়ে থাকে, এই অভিযোগ সঠিক নয়। পুরসভার কর্মী এবং গাড়ি শহরের আবর্জনা ফেলার কাজে রয়েছে। উপযুক্ত নজরদারির ব্যবস্থাও চলছে।’’