বোকারো শাখায়। নিজস্ব চিত্র।
কাজের চাপে অনেক রেলকর্মীই ছোটখাটো অসুস্থতায় যেতে পারেন না রেলের বিভাগীয় হাসপাতালে। আবার বহু স্টেশন এলাকায় রেলের স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নেই। সে কারণেই রেলকর্মীদের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে মোবাইল হেল্থ ইউনিট চালু করেছেন আদ্রার রেল কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েক মাস ধরেই চলছে ওই ইউনিট। কী হচ্ছে এই প্রকল্পে? ট্রেনে চেপে রেলের চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্যকর্মীরা যাচ্ছেন বিভিন্ন স্টেশনে। সেখানেই রেলকর্মীদের চিকিৎসা করছেন তাঁরা। বড়সড় কোনও সমস্যা ধরা পড়লে তাঁদের আদ্রায় রেলের বিভাগীয় হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার এই ভ্রাম্যমাণ হেল্থ ইউনিট এক একটি শাখা নির্বাচন করে সেই শাখার স্টেশনগুলিতে গিয়ে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।
বস্তুত, রেলের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কর্মীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভাগীয় হাসপাতাল থেকে ডিভিশনের বাকি ১০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকা ও পরিকাঠামোর অভাবে ঠিক মতো চিকিৎসা মেলে না বলে অভিযোগ আছে রেলকর্মীদের। এ কথা মাথায় রেখেই আদ্রার রেলকর্তৃপক্ষ এই বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।
রেল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলির একটি কামরার একাংশকেই ভ্রাম্যমান ডিসপেনসারি হিসাবে তৈরি করে নেওয়া হচ্ছে। স্টেশনে ট্রেন থামলে সেখানেই আসছেন রেলকর্মীরা। তবে এই ভ্রাম্যমান হেল্থ ইউনিটের মাধ্যমে রেলকর্মীদের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা কতটা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব, এই প্রশ্ন তুলেছে রেলকর্মী সংগঠনগুলি। তাঁরা জানাচ্ছেন, স্টেশনগুলিতে খুবই অল্প সময়ের জন্য ট্রেন থামে। তার মধ্যে একাধিক রেলকর্মীর কী ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, যাঁদের বেশি সময় লাগছে, তাঁদের তুলে নিয়ে পরীক্ষা করার পরে পরবর্তী স্টেশনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
রেলের আরও দাবি, পুরোদস্তুর চিকিৎসা করা সম্ভব না হলেও আপাতত এ ভাবেই কিছুটা হলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করা হচ্ছে। কোন ট্রেনে কোন শাখায় কবে ভ্রাম্যমান হেল্থ ইউনিট যাবে, তা রেলের স্বাস্থ্য দফতর আগাম জানিয়ে দিচ্ছে স্টেশন ম্যানেজার-সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের আধিকারিকদের। তাঁরা স্টেশনে কর্মরত রেলকর্মীদের সে খবর দিচ্ছেন।
ডিআরএম শরদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘রেলকর্মীদের স্বাস্থ্য যাতে ঠিক থাকে, সে জন্যই এই ভ্রাম্যমান হেল্থ ইউনিটের মাধ্যনে স্টেশনে কর্মরত রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের লোকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। বড়সড় কোনও সমস্যা ধরা পড়লে আদ্রার বিভাগীয় হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে তাঁদের যেতে বলছেন চিকিৎসকেরা।”
বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমান হেল্থ ইউনিট বোকারো-কোটশিলা শাখার বিভিন্ন স্টেশনে গিয়ে রেলকর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। বোকারো-রাঁচী প্যাসেঞ্জারে ওই শাখায় গিয়েছিলেন রেলের বোকারো স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, ১২ জুলাই হেল্থ ইউনিট গোমো-খড়গপুর প্যাসেঞ্জারে যাবে আদ্রা-গোদাপিয়াশাল শাখায়। পরে ১৯ জুলাই পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম প্যাসেঞ্জার ট্রেনে গিয়ে পুরুলিয়া-চান্ডিল শাখার রেলকর্মীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করবেন চিকিৎসকরা। ২৬ জুলাই গড়বেতা-রাঁচী প্যাসেঞ্জারে আদ্রা-কোটশিলা শাখার স্টেশনের কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।