আড়শা থানা থেকে দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানোর আগে। নিজস্ব চিত্র
ঘরে পড়ে বৃদ্ধ দম্পতির দেহ। কারও ধড়ে মাথা নেই। ঘরের মেঝে, দেওয়ালে রক্তের দাগ। পুরুলিয়ার আড়শা থানার তানাশি গ্রামে শুক্রবার বেলায় খোঁজ নিতে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখে শিউরে ওঠেন পড়শিরা। পুলিশ জানায়, নিহতেরা হলেন পাতই মাঝি (৬৫) ও লেশাকি মাঝি (৬০)। দুপুরে পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করে, ময়না-তদন্তে পাঠায়। ডিএসপি বিদ্যুৎ তরফদার ও সিআই উত্তম মণ্ডল গ্রামে তদন্তে যান। জেলার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘দম্পতি খুনের কারণ স্পষ্ট নয়। তদন্ত শুরু হয়েছে। মুণ্ডগুলির খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ মনে করছে, ধারাল অস্ত্র দিয়েই এ কাণ্ড ঘটানো হয়েছে । কিন্তু সেটি মেলেনি। মুণ্ড দু’টিও পাওয়া যায়নি।
অযোধ্যাপাহাড়ের নীচের তানাশি গ্রামে বৃদ্ধ দম্পতি একটি ছোট্ট বাড়িতে থাকতেন। সামান্য জমিতে চাষ আর পশুপালন করতেন। দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে দু’জন মারা গিয়েছেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো ছেলের স্ত্রী-ও মারা গিয়েছেন। দম্পতির ছোট ছেলে মুকুন্দ কয়েকদিন আগে আড়শার কালীপুরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। এ দিন খবর পেয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। মুকুন্দের অভিযোগের ভিত্তিতে এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্রের খবর, পড়শি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে তারা জেনেছে, ওই দম্পতি গ্রামে নির্বিবাদী হিসেবে পরিচিত। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাঠ থেকে গরু চরিয়ে ফিরে খেয়ে দেয়ে রোজকার মতো শুয়ে পড়েছিলেন পাতই ও লেশাকি। রাতে ওই বাড়ি থেকে কোনও শব্দ কেউ শুনতে পাননি। তা হলে কেন খুন হতে হল তাঁদের?
মুকুন্দর কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য তথ্য মেলেনি। পুলিশ সূত্রের দাবি, তিনি তাদের জানিয়েছেন, অনেক বছর আগে গ্রামেই কেউ-কেউ তাঁর মাকে ডাইনি বলে অপবাদ দিয়েছিলেন। তা নিয়ে এক পড়শির সঙ্গে তাঁদের ঝামেলা হয়। সে সময় গরু বিক্রি করে তাঁদের জরিমানার টাকা দিতে হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, যে পরিবারের সঙ্গে তাঁদের ঝামেলা হয়েছিল, তাঁদের কেউ এখন গ্রামে থাকেন না। অন্য একটি সূত্রে পুলিশের কাছে খবর এসেছে, পাতই মাঝির সঙ্গে কয়েকবছর আগে গ্রামেরই এক জনের জমি সংক্রান্ত বিবাদ হয়েছিল। সে ঘটনাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।