গলুন্দি গ্রামে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
এই কালীপুজোয় কোনও পুরোহিত থাকেন না। বাড়ির গৃহকর্তার হাতেই পূজিত হন দেবী। বোলপুরের বাহিরি পাঁচশোয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গলুন্দি গ্রামে প্রায় তিনশো বছরের পুরনো কালী পুজোয় এই রীতি আজও চলে আসছে।
পুরনো ঐতিহ্য মেনে আজও পুজিত হয়ে আসছেন ভট্টাচার্য পরিবারের দক্ষিণা কালী। আগেকার দিনে সমস্ত আচার বিধি মেনে এখনও পুজোর সমস্ত আয়োজন করা হয়ে থাকে সেখানে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিনশো বছর আগে পার্বতীচরণ চট্টোপাধ্যায় এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। এরপর বংশপরম্পরায় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা সেই পুজো চালিয়ে আসছিলেন। ব্রিটিশ আমলে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য রামেশ্বর চট্টোপাধ্যায়কে বাহিরি পাঁচশোয়া এলাকার একটি সংস্কৃত পাঠশালা (টোলের ) পন্ডিত করা হয়। সেই সময় তাঁকে ভট্টাচার্য উপাধিও দেওয়া হয়। যার ফলে পরবর্তীকালে ওই পরিবার চট্টোপাধ্যায় পরিবার থেকে ভট্টাচার্য পরিবার হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পায়। পুজোও ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো হিসেবে পরিচিত এলাকায়।
জনশ্রুতি থেকে জানা যায় দেবী সেই সময় যেভাবে পঞ্চমুণ্ডির আসনে পূজিত হতেন এখনও ঠিক সেভাবেই সেখানে পূজিত হয়ে আসছেন। আগে চালা ঘরে পূজো হলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে স্থায়ী মন্দির করে দেওয়া হয়, সেখানেই এখন পূজিত হন দেবী। এই কালী দক্ষিণা কালী নামেও পরিচিত। এখনও এখানে বলিদান প্রথার প্রচলন রয়েছে। এই পুজোর বিশেষত্ব হল এই পুজোয় আলাদা কোনও পুরোহিত থাকেন না। বংশপরম্পরায় বাড়ির গৃহকর্তারায় এই পুজো করে থাকেন।
পুজোর দিন তিন রকম অন্নের ভোগও নিবেদন করা হয় দেবীকে। এই পুজো পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামের আশেপাশে সেই অর্থে কোনও কালীপুজো না হওয়ায় এটি বিগত কয়েক বছর ধরে সর্বজনীন পুজোও হয়ে উঠেছে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গ্রামের সকল মানুষই এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। এই পুজো দেখতে বোলপুর সহ দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। ভট্টাচার্য পরিবারের অন্যতম সদস্য বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, বিমল ভট্টাচার্যরা বলেন, “পূর্বপুরুষের আমল থেকে আমাদের এই পুজো চলে আসছে। পুরনো সমস্ত রীতি মেনে নানা ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজও সেই পুজো আমরা চালিয়ে যাচ্ছি এবং একইভাবে বংশপরম্পরায় এই পুজো চলতে থাকবে।”