বাজার পেয়েও রাস্তায় হকার

এক দিকে, জবরদখল হয়ে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। অন্য দিকে, সেই দখলদারদের সরাতে গেলে তাঁরা উল্টে পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। কিন্তু পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য পুরসভা ছাউনি করে দিলে সেখানে আবার হকার ও ব্যবসায়ীরা যেতে নারাজ। এমনই ঘটনার সাক্ষী বাঁকুড়া শহর। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁকুড়া পুরসভার গড়ে দেওয়া দু’টি মার্কেট কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ফেলে রেখেছেন। উল্টে সেখানে নানা রকম দুষ্কর্ম ঘটছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

স্থায়ী বাজার এখন আঁস্তাকুড়।

এক দিকে, জবরদখল হয়ে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। অন্য দিকে, সেই দখলদারদের সরাতে গেলে তাঁরা উল্টে পুনর্বাসনের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। কিন্তু পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য পুরসভা ছাউনি করে দিলে সেখানে আবার হকার ও ব্যবসায়ীরা যেতে নারাজ।

Advertisement

এমনই ঘটনার সাক্ষী বাঁকুড়া শহর। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁকুড়া পুরসভার গড়ে দেওয়া দু’টি মার্কেট কার্যত অব্যবহৃত অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ফেলে রেখেছেন। উল্টে সেখানে নানা রকম দুষ্কর্ম ঘটছে বলেও অভিযোগ।

১৯৯৩ সালে তামলিবাঁধ নেহেরু পার্ক এলাকায় দু’টি বাজার গড়ে দিয়েছিল বাঁকুড়া পুরসভা। তখন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান ছিলেন সিপিএমের সেখ দেরাশতুল্লাহ। সেই সময় বাঁকুড়ার জেলাশাসক ছিলেন রীনা ভেঙ্কটরামন। বাঁকুড়া পুরএলাকার রাস্তা থেকে জবরদখল উচ্ছেদে তাঁর কড়া পদক্ষেপের কথা আজও বাঁকুড়াবাসীর মুখে মুখে ঘোরে। সেখান থেকে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘বুলডোজার লেডি’। মাচানতলার জবর দখলকারীদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্যই পুরসভা ওই দু’টি বাজার গড়েছিলেন কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে। শতাধিক সব্জী বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী নামমাত্র ভাড়ায় ওই বাজারে স্টল পেয়েছিলেন।

Advertisement

তবে গোড়া থেকেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। বাঁকুড়া পুরসভার তৎকালীন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বর্তমানে সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ব্যবসায়ীরা নিজেদের নামে স্টল নিলেও সেই স্টল ভাড়ায় খাটিয়ে নিজেরা সেই রাস্তার পাশেই ব্যবসা করতে থাকেন। বাজার গড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই পুরসভার তৎকালীন বিরোধী দল কংগ্রেসের আনা অনাস্থায় ক্ষমতাচ্যুতও হন সিপিএম পুরপ্রধান। ধীরে ধীরে বাজারটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। হকাররাও যথারীতি মাচানতলায় রাস্তার পাশেই ফের ব্যবসা শুরু করেন।’’

কিন্তু লক্ষাধিক টাকার পুরসভার সম্পত্তির এ ভাবে অপব্যবহার হচ্ছে, পুরসভা কী পদক্ষেপ করেছে? বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বলেন, “মাঝখানে পুলিশ জবরদখলকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে ওই বাজারে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছিল। তবে এখন ওই বাজারে বেচাকেনা হচ্ছে কি না জানি না।’’ এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, দু’টি বাজারই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খড়, ঠেলাগাড়ি, মোটরবাইক, সাইকেল রাখা রয়েছে। যত্রতত্র ঘুঁটে দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের ক্ষোভ, “নিকাশি থেকে স্থায়ী চালা করে দেওয়া হয়েছে এখানে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এখানে না বসে সেই রাস্তার পাশে গিয়ে বসছেন। আমাদেরও ঝুঁকি নিয়ে জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে।’’ বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ, রাতে এই বাজারের ছাউনিতে বাজে আড্ডা বসে। সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করছে লোকজন। দূর্গন্ধে ঘোরাঘুরি করা দায়।

রাস্তায় পসরা সাজিয়ে ব্যবসায়ী।

এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর তথা এই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী আল্পনা পাল বলেন, “মাঝে মধ্যে লোক লাগিয়ে ওই বাজারের আবর্জনা পরিষ্কার করানো হয়। লোকজনকেও নোংরা না করার জন্য বহুবার বলেছি। কিন্তু কেউ শোনে না।’’ তিনি জানান, সব্জি বিক্রেতাদেরও বাজারে গিয়ে বসতে বলা হয়েছে। কয়েক ফুট দূরে রাস্তার পাশে লোকে ঝাঁকা নিয়ে সব্জি বিক্রি করেন। তবু বাজারের ভিতরে কেউ বেচাকেনা করতে যেতে রাজি নন।

মাথার উপরে ছাউনি আছে, বসার জন্য স্থায়ী স্টল আছে, পাকা নিকাশি ব্যবস্থা আছে বাজারের ভিতরে। তাও কেন যেতে অনীহা? রাস্তার পাশে সব্জি, হরেকমালের পসরা সাজিয়ে বসা একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, “ভিতরে বসলে খদ্দের মিলবে না। বিক্রিবাটায় অনেক সময় যাবে। লাভও হবে না। তাই রাস্তার ধারই ভাল।” আর রাস্তা সরু, যানজটা, দুর্ঘটনার আশঙ্কা? ব্যবসায়ীরা এ সব নিয়ে ভাবতে নারাজ। যদিও যানজটে নাজেহাল বাঁকুড়া পুরবাসী দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা দখল মুক্ত করার দাবি তুলে আসছেন।

— নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement