প্রতীকী চিত্র
পাশের গ্রামের পুকুরের ধারের একটি গাছ থেকে উদ্ধার হল এক পরিযায়ী শ্রমিকের ঝুলন্ত দেহ। শুক্রবার রাতে মুরারইয়ের বীরনগর গ্রামে দেহটি দেখে মুরারই থানায় খবর দেন স্থানীয়রা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম নাপু মাল (৩৮)। তিনি এক কিলোমিটার দূরের মহুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত করছে পুলিশ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন নাপু। লকডাউনের ফলে সেখানেই আটকে যান তিনি। পরে জুন মাসে বিমানে দমদমে আসেন। সেখান থেকে গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর পরিজনের দাবি, বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর থেকেই রোজগার না থাকায় অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। রেশন পেলেও এলাকায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ না থাকায় আবারও কেরলে ফিরতে চেয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, ভিন্ রাজ্যে ফেরার জন্য বাস ভাড়া জোগাড় করতে পারছিলেন না তিনি।
পরিবার সূত্রে খবর, সংসার চালানোর খরচ নিয়ে শুক্রবার সকালে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নাপু। সন্ধে পর্যন্ত বাড়ি না ফেরার খোঁজ খবর শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। পরে পাশের গ্রামে তাঁর দেহ উদ্ধারের খবর মেলে। মৃতের ভাই রপু মাল বলেন, ‘‘দাদা গ্রামে কাজ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে রোজগারহীন হয়ে ঘরে বসেছিল। সংসার চালানোর জন্য বাজারে দেনা করে ফেলেছিল।’’ সেই অবসাদ থেকেই তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে দাবি নাপুর পরিবারের।
প্রশাসনের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ওই ব্যক্তি চাইলে অবশ্যই কাজ পেতেন। মুরারইয়ের বিডিও নিশীথভাস্কর পাল বলেন, ‘‘যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক একশো দিনের কাজের জন্য আবেদন করেছিলেন সকলেই কাজ পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা পঞ্চায়েতে খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, নাপুর জবকার্ড ছিল না। মহুরাপুর পঞ্চায়েতের প্রধান বদরুনেশা বেগম বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের জন্য ওই ব্যক্তি পঞ্চায়েতে আবেদন করেননি। যদি আবেদন করতেন নিশ্চয় কাজ পেতেন।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, তিন মাস ধরেই মহুরাপুর অঞ্চলে ১০০ দিনের কাজে প্রতিদিন হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। গত দু’সপ্তাহ ধরে বর্ষার কারণে তিনটি প্রকল্পে মহুরাপুর গ্রামে ৪৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন। পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, ‘‘খবর পেয়েছি ভিন্ রাজ্যে কাজ করার সময় কিছু টাকা উনি স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে বাড়ি নির্মাণের জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা স্ত্রী তাঁর বাবাকে দিয়ে দেওয়ায় অশান্তি চলছিল। তার জেরেই নাপু আত্মহত্যা করেছেন।’’
মৃতের ভাই বলেন, ‘‘দাদার দু’টি ছোট শিশু রয়েছে। প্রশাসনের কাছে আবেদন করব দাদার পরিবারের জন্য কোনও সরকারি প্রকল্পের ব্যবস্থা করলে পরিবারটি উপকৃত হবে।’’ বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’